সেরা বোলারদের তালিকায় শীর্ষ তিনে মুস্তাফিজ

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার পথচলা মাত্র ১২ মাসের একটু বেশি। কিন্তু এই অল্প সময়েই নিজেকে একজন বিশ্বমানের বোলারে পরিণত করেছেন। ম্যাচের কঠিন সময়ে অধিনায়কের আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছেন। গেল ১২ মাসে মুস্তাফিজই একমাত্র বোলার যিনি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের স্লগ ওভারে ৭ এর নিচে রান দিয়েছেন। যদিও এগুলো মুস্তাফিজের ক্যারিয়ারের একেবারে শুরুর পরিসংখ্যান।

এক বছরের মধ্যেই গড় ও ইকোনোমি রেটের দিক দিয়ে শীর্ষ তিনে অবস্থান নিয়েছেন। এ বছর ৪৮ জন বোলার ৭৫ ওভার করে বল করেছেন। তাদের তালিকায় গড় হিসেবে শীর্ষে আছেন মুস্তাফিজ। আর ইকোনোমি হিসেবে শীর্ষ তিনে রয়েছেন তিনি। তিনি তিনজন বোলারের একজন যাদের টি-টোয়েন্টিতে ইকোনোমি রেট ৬ এর নিচে। তিনজনের মধ্যে তিনি একমাত্র পেসার। বাকি দুজন স্পিনার। তারা হলেন সুনীল নারিন ও রবীচন্দ্রন অশ্বিন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক বছরেই এতকিছু অর্জন করা সত্যিই স্মরণীয় ও প্রশংসনীয়।

প্রথম শ্রেণির ম্যাচে তার অভিষেক হয়েছে ২ বছর আগে। আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার অভিষেক হয়েছে এক বছর আগে। ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তার অভিষেক হয়। কিন্তু এই অল্প সময়েই সে অসাধারণ কিছু সাধন করেছে। আইপিএলেও নিজের জাত চেনাচ্ছেন। আত্মবিশ্বাস ও আত্মপ্রত্যয়ে বলীয়ান একজন বোলার মুস্তাফিজ। পরিবেশ, পরিস্থিতি কিংবা মাঠ ভর্তি দর্শক। কোনোটিই তার মনোসংযোগে বিঘœ ঘটাতে পারে না। তিনি আস্তে আস্তে বাংলাদেশের বড় তারকা হয়ে উঠছেন।

সব ধরণের ক্রিকেটে মুস্তাফিজের যে পরিসংখ্যান সেটা সত্যিকার অর্থেই অবিশ্বাস্য। প্রত্যেক ফরম্যাটেই তার বোলিং গড় ২০ এর নিচে। ১৫টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে তার সবচেয়ে খারাপ বোলিং গড়ও ১৮.৩৮। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব ফরম্যাটে তার গড় ১৫ এর নিচে। যদিও তিনি মাত্র ২টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। টি-টোয়েন্টি ও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তার বোলিং গড় ছয় এর নিচে। ওয়ানডেতে ৪.৩ এর নিচে। প্রত্যেক ম্যাচে তিনি গড়ে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন। ক্যারিয়ার লম্বা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য তার এই গড়ও পরিবর্তিত হবে। কিন্তু তিনি যে বিশ্বসেরা বোলার হওয়ার যোগ্যতা রাখেন সেটা ইতিমধ্যে প্রমাণ দিয়েছেন।

মুস্তাফিজের মন্দভাগ্য যে ২০১৫ বিশ্বকাপে তার অভিষেক হয়নি। সেটা হলে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্ব মঞ্চেই নিজেকে মেলে ধরতে পারতেন তিনি। বিশ্বকাপের পর অভিষেক ওয়ানডে সিরিজের দুই ম্যাচেই তিনি নিয়েছিলেন ১১ উইকেট!

টি-টোয়েন্টিতে সাধারণত ব্যাটসম্যানদের আধিপত্য থাকে। বোলাররা মার খান। কিন্তু মুস্তাফিজ তার ব্যতিক্রম। টি-টোয়েন্টি কিংবা ওয়ানডে; ব্যাটসম্যানরা তার বল খেলতে গলদঘর্ম হন। পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিষেক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অসাধারণ পারফরম্যান্স করেছেন। সেদিন তুলে নিয়েছিলেন শহিদ আফ্রিদি ও মোহাম্মদ হাফিজের মতো ব্যাটসম্যানদের। ২০ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ২ উইকেট।

তার দারুণ একটি যোগ্যতা হল শেষ পাঁচ ওভারে উইকেট তুলে নেওয়ার পাশাপাশি রান কম দেওয়া। কঠিন ওভারের সময়গুলোতে তিনি বেশ কার্যকর বোলার। ইনিংসের মাঝে বল হাতে এসে শক্তিশালী জুটি ভেঙে দেওয়াও তার বৈশিষ্ট্য। আর ডেথ ওভার বল হাতে এসে রান দিতে কিপটেমি করা। অবশ্য যথেষ্ট উইকেট থাকা সত্ত্বেও ডেথ ওভারে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা তার বলে রান নিতে পারেন না।

যদিও আইপিএলে তিনি পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট নিতে পারেননি। কিন্তু সেখানেও তিনি বেশ কার্যকর। পাওয়ার প্লেতে এ পর্যন্ত ৮ ওভার বল করে মাত্র ৪৫ রান দিয়েছেন। ব্যাটসম্যানদের উপর দারুণ চাপ তৈরি করেছেন। আর এই চাপ পরবর্তী বোলারদের উইকেট নিতে সহায়তা করেছে। পাওয়ার প্লেতে তার ইকোনোমি রেট বিস্ময় জাগানিয়া ৫.১৮!

যদিও ইনিংসের মধ্যবর্তী সময়ে বল হাতে তাকে খুব বেশি দেখা যায়নি। আইপিএলে ডেথ ওভারে তিনি ১১.২০ গড়ে নিয়েছেন ৫ উইকেট। যেখানে তার ইকোনোমি রেট ৬.২২।

গেল বছরের এপ্রিলে অভিষেক হওয়ার পর ডেথ ওভারে যেসব বোলার ২৫ ওভারের বেশি বল করেছেন তারা কেউ-ই মুস্তাফিজের কাছাকাছি নেই। গেল এপ্রিল থেকে ৩২ জন বোলার ডেথ ওভারে বল করেছেন। কিন্তু তারা কেউ-ই মুস্তাফিজের ইকোনোমির ধারেকাছে নেই। শেষ ৫ ওভারে মুস্তাফিজের ইকোনোমি রেট ৭ এর নিচে। তার পরে রয়েছেন ইংল্যান্ডের মিশেল ক্লেডন। তার ইকোনোমি রেট ৭.৫৬। মুস্তাফিজের চেয়ে ১০% বেশি রান দিয়েছেন।

স্লগ ওভারে যেখানে ব্যাটসম্যানরা বাউন্ডারি আর ওভার বাউন্ডারির ফুলঝুরি ছোটান সেখানে মুস্তাফিজের করা স্লগ ওভারে প্রতি নয় বলে একটি চার অথবা ছয় মারতে পারে ব্যাটসম্যানরা। অন্যদিকে ভালো বোলারদের প্রতি ছয় বলে একটি বাউন্ডারি হাঁকান ব্যাটসম্যানরা। ডোয়াইন ব্রাভো প্রতি ৫.৮৫ বলে একটি বাউন্ডারি হজম করেন। জেমস ফকনারের প্রতি ৫.৫৪ বলে একটি বাউন্ডারি হাঁকান ব্যাটসম্যানরা। ভারতের জাসপ্রিত বুমরাহর প্রতি ৬.০৯ বলে একটি বাউন্ডারির মার থাকে। অন্যদিকে ভুবনেশ্বর কুমারের প্রতি ৫.৬৩ বলে একটি করে বাউন্ডারি থাকে।

এখনো পর্যন্ত মুস্তাফিজের ওভারের প্রতিটি বল কোনো ব্যাটসম্যান ভালোভাবে বুঝতে পারেননি। টি-টোয়েন্টিতে ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে তার গড় ১৩.৭৩। আর বামহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে তার গড় ১৭.৫৮। এই ফরম্যাটে তিনি এবি ডি ভিলিয়ার্স, ক্রিস গেইল, রোহিত শর্মা, স্টিভেন স্মিথ, কেন উইলিয়ামসন ও শেন ওয়াটসনের মতো ব্যাটসম্যানদের শিকারে পরিণত করেছেন। এ ছাড়া দারুণ দারুণ সব ডেলিভারিতে বিভ্রান্ত করেছেন বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদেরকে।

তথ্যসূত্র : ক্রিকইনফো



মন্তব্য চালু নেই