“সে প্রেমিকাকে ছেড়ে আমার কাছে আসতে চায়, শারীরিক সম্পর্ক করতে বলে…”

“আপু আমি এখন একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩য় বর্ষে পড়ছি। আমার জীবনে আমি প্রথম সম্পর্কে জড়াই ক্লাস নাইনে থাকতে কিন্তু আমার পরিবার কিছুতেই সেই ছেলেকে মেনে নেবে না। এমনটা বুঝতে পেরে আমি সেই ছেলের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে আনি। ক্লাস টেনের প্রথম দিকে আমার সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়।

টেনের শেষের দিকে একদিন কোচিং-এ পড়ার সময় হঠাৎ বাইরে তাকিয়ে একজনকে দেখতে পাই, আমার চোখ সেখানে আটকে যায়। একটা মানুষ এত্ত সুন্দর হয় কীভাবে? প্রথম দেখাতেই চোখ ফেরাতে পারিনি আপু। কিছুদিন পরে খেয়াল করি, সে আমাদের ক্লাসে আসলো। বুঝলাম সে আমাদের সাথেই পড়ে। সেদিন থেকে ওকে পছন্দ করা শুরু করে দিই। কিন্তু কিছুদিন পর জানতে পারি তার প্রেমিকা আছে। খুব কষ্ট পাই কিন্তু নিজেকে ফিরিয়ে আনতে খুব কষ্ট হয়। এদিকে আমার বাসায় বিষয়টা টের পায়। তারা জানতে চাইলে আমি সব বলে দেই। আমাকে তারা বুঝায়, আমি বুঝি যে এই পছন্দের কোন ভবিষ্যৎ নেই। কিন্তু তাও নিজেকে পুরো ফিরিয়ে আনতে আমার ২ বছর লেগে যায়। আমি তখন এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করি, যখন আমি তার থেকে নিজেকে সরিয়ে আনতে সক্ষম হই।

এইচএসসির পর আমি মেডিকেলে কোচিং এ ভর্তি হই। তখন আমার পরিচয় হয় দুঃসম্পর্কের এক মামার সাথে। তার আগে একটি সম্পর্ক ছিলো কিন্তু কোনভাবে ভেঙে গিয়েছিলো। আমিও তাকে আমার পছন্দের ছেলের কথা জানাই এবং বলি, আমি ২ বছর ধরে তাকে ভালোবাসি আর এর থেকে সরে আসতে পারছিনা। তখন সে আমাকে সাপোর্ট দেয় এবং আমাকে প্রোপোজ করে। আমি প্রথমে রাজী হইনি। পরে কি ভেবে রাজী হলাম। কিন্তু কিছুদিন সম্পর্কের পরে সে বলে, তার পক্ষে সম্পর্ক রাখা সম্ভব না। তখন আমি খুব ভেঙে পড়ি। তার পরিবারের অনেকের সাথে যোগাযোগ করি। কিন্তু তাদেরও একই কথা। তারা আমাকে মেনে নিতে পারবেনা।

যাইহোক, অনেক ঝামেলার পরে আমাদের সম্পর্ক শেষ হয়। এই সম্পর্কের জন্য আমার জীবনযাত্রা পুরো বদলে যায়। আমার আর মেডিকেলে চান্স পাওয়া হয়না। তারপর একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। ভার্সিটিতে ফার্স্ট ইয়ারের সময় আমার এক মেয়ে ফ্রেন্ডের কাজিনের সাথে পরিচয় হয়। আমরা প্রথমে খুব ভালো বন্ধুত্ব করি। কিন্তু এক সময় সেও প্রোপোজ করে। আমি রাজী হই কারণ সে দেশের বাইরে থাকতো। আর আম্মু বিদেশ খুব পছন্দ করে। তাছাড়া তাদের ফ্যামিলি স্ট্যাটাস, পড়াশোনা সবই মিলে গেছিলো। তাই সব মিলে আমি গ্রহন করি।

প্রায় এক বছর আমাদের ভালোমত সম্পর্ক ছিলো, আমরা ফোনেই কথা বলতাম। এ বছর পরে ও বাংলাদেশে আসে এবং আমাদের দেখা হয়। আমি তার বিষয়ে খুব কনফিডেন্ট ছিলাম যে আমাদের বিয়ে হবেই। আর এজন্যই আমাদের মাঝে শারীরিক সম্পর্ক বাদে সবই হয়। আমি খুব দুর্বল হয়ে পড়ি ওর প্রতি। সেও আমাকে তেমনটাই বলে। কিন্তু ২ মাস পরে ও আবার দেশের বাইরে চলে যায়। আপু এই দুই মাসে আমরা প্রায় প্রতিদিনই দেখা করি কিন্তু সমস্যা শুরু হয় ও যাওয়ার পর থেকে। ফেসবুকে অনেকে আমার সাথে যোগাযোগ করে আর সবাই বলে ওর সাথে ওদের সম্পর্ক চলছে। শারীরিক সম্পর্কও হয়েছে ওদের মাঝে। এসব শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। আমি ওর পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলে তারা আমাকে পছন্দ করেনি। কিন্তু ও যখন বাংলাদেশে ছিলো, তখন তারা বলেছিলো যে আমাকে তারা পছন্দ করে। এখন পুরাই উলটা কথা তাদের। ও এসবের কিছুই স্বীকার করতোনা। ওর বন্ধুদের কাছ থেকে জানতে পারি ও আসলেই এমন ধরনের।

তখনই আরেকটা ভুল করে ফেলি। সুইসাইড করার চেষ্টা করি। কিন্তু বমির কারণে সেটা হয়নি, আজ পর্যন্ত বেঁচে আছি। এরপর আস্তে আস্তে ওর কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে আনি আর ডিসিশন নেই যে বিয়ের আগে আর কোন সম্পর্কে জড়াবোনা। খুব কঠিন করে ফেলি নিজেকে। কিন্তু সবসময়ই নিজেকে খুব ছোট মনে হত, আমি বিয়ের আগেই এত কিছু করলাম, আমাকে অন্য কেউ টাচ করলো, ডিপ্রেশনে ভুগছিলাম। এর মাঝে পরিচয় হয় এক আত্মীয়ের সাথে যে একজন হাফেজ। আমি তার সাথে কিছুদিন কথা বলি। এবং বলি যে আমি অনেক গুনাহর কাজ করেছি। আমাকে মুক্তির পথ দেখান। আর আমি তাকে আমার জন্য শাফায়েতের জন্যেও বলি। এক পর্যায়ে সে আমাকে প্রোপোজ করে। আমি খুব অবাক হই। একজন হাফেজ হয়েও সে আমাকে প্রোপোজ করলো! আমি তাকে অনেক বুঝাই যে এটা সম্ভব না। কিন্তু সে বলে সে আমাকে খুব ভালোবাসে। তার কথায় আর আমার মুক্তির চিন্তা করে আমি রাজী হই কিন্তু তার কিছুদিন পর আমি জানতে পারি তার আগে একটি সম্পর্ক এবং সে ঐ মেয়ের সাথে অনেকবার শারীরিক সম্পর্ক করেছে। এখন সে ঐ মেয়েকে ছেড়ে আমার কাছে আসতে চাইছে। কিন্তু সে আমাকেও ওসব করতে বলে।

আমি তাকে বুঝাই যে এসব সম্ভব না। সে একবার বোঝে, আবার চায়। আপু এখন আমি কী করবো? আমিও তাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আবার ঐ মেয়েটার জন্যও খারাপ লাগছে। আবার এটাও ভাবি যে আমি হয়তো চেষ্টা করলে তাকে ভালো পথে আনতে পারবো। আবার এটাও ভয় হয় যদি আমার সাথেও ওসব করে?

আপু, আমার জীবনের ঘটনাগুলো সংক্ষেপে বললাম। জানি আমাকে সবাই খারাপ ভাবছে কিন্তু আপু একটা কথা বলতে পারি, আমি শুধুমাত্র একটু সত্যিকারের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য সবার সাথে সম্পর্কের শুরু করেছিলাম, আমি কাউকে ছেড়ে আসিনি। কেবল প্রথমজন ছাড়া। বাকী সবার সাথে সম্পর্ক হওয়ার পর আমি তাদের ঘটনা ঘুলো জানতে পারি। কিন্তু সবাই আমাকে ছেড়ে গেছে। আমি একটু সত্যিকারের ভালোবাসা খুঁজছিলাম আপু। পাইনি। শুধু প্রতারণা পেয়েছি।

আপু আমার এখন এবং ভবিষ্যতে কী করা উচিত? কী করলে আমি আর প্রতারিত হবনা, আর কষ্ট পাবোনা। আমাকে একটা সঠিক সমাধান দিন আপু।”

পরামর্শ:
আমি খুব স্পষ্ট করে একেবারেই শুরুতেই বলে দিচ্ছি আপু, আপনার এই তথাকথিত
হাফেজ একটা বিশাল ধান্দাবাজ। সে আপনার সাথেও ঠিক তাই করবে, যা এই মেয়েটির সাথে করছে। মেয়েটির দেহ নিয়ে যা মজা করার সে করে ফেলেছে, এখন আপনার দেহ নিয়ে করবে। একজন হাফেজ কি জানে না যে ইসলামে বিবাহ বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক কি ভয়ানক পরিমাণ গুনাহের কাজ? সে এই কাজ করছে। এবং মেয়েটিকে ছেড়ে এখন আপনার সাথেও করতে চাইছে। আর আপনি কিনা বলছেন সেই ছেলেকে ভালোবেসে ফেলেছেন… ছিঃ ছিঃ ছিঃ আপু! এতটা স্বার্থপর , এতটা নীচ কাজে কীভাবে সমর্থন দিচ্ছেন আপনি? যে মানুষ নিজের ধর্ম, নিজের প্রেমিকার সাথে সৎ থাকতে পারেনি; সে আপনার সাথে সৎ কীভাবে থাকবে? কখনোই থাকবে না, আমি লিখে দিতে পারি। সৃষ্টিকর্তার সাথে বেঈমানি করা মানুষ কখনোই মানুষের সাথে বিশ্বস্ত হয় না। যদি এই ছেলেকে বিশ্বাস করেন, আপনার জীবনের দুরাবস্থা কেউ ঠেকাতে পারবে না। আপনাকে ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলে দেবে সে, কেবল কান্নাই জুটবে আপনার কপালে। আজ যে মেয়েটিকে এই পরিণতির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন আপনি, কাল একই পরিণতি আপনারও হবে। “ভালোবাসা দিয়ে বদলে দেব”- এইসব ডায়লগ কেবল সিনেমাতেই সম্ভব। বাস্তবে এটা কখনো সম্ভব হয় না । যে এই আশা করে সে আহাম্মক।

আপনার কারণে-অকারণে প্রেম করা ও ভুল মানুষের সাথে প্রেম করার একটা প্রবনতা আছে দেখতে পাচ্ছি আপু। আপনি খুব আবেগপ্রবণ আর আপনার এই আবেগই আপনার জীবনের সকল সর্বনাশের কারণে। যে সময়ে নিজের লেখাপড়ার দিকে মনযোগ দেয়া উচিত, আপনি সেই সময়ে প্রেম করতে গিয়েছেন বারবার। শুধু তাই না, ছেলের পরিবার পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছেন যা খুবই খারাপ হয়েছে। এমন মেয়েকে ছেলেদের পরিবার কখনোই পছন্দ করে না, রীতিমত বেহায়া মনে করে। নিজের ভালো চাইলে এই হাফেজ ছেলের সাথে আপনি অবিলম্বে সম্পর্ক ত্যাগ করবেন। শুধু তাই না, তাঁর প্রেমিকাকেও জানিয়ে দেবেন প্রেমিকের আসল রূপ। এবং নিজে সমস্ত মনযোগ লেখাপড়ায় লাগিয়ে দেবেন। দয়া করে কোন ছেলের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে যাবেন না। লেখাপড়া শেষ করুন, ক্যারিয়ার গোছান, তারপর এসব নিয়ে ভাববেন। তাছাড়া আমি মনে করি আপনার জন্য সবচাইতে ভালো হবে পারিবারিক ভাবে বিয়ে করা। হাফেজ ছেলেটিকে আপনি সব বলেছেন বিধায় সে আপনাকে সস্তা ধরে নিয়ে ইউজ করতে চাইছে।

আমি আবারও বলছি, এই ছেলের সাথে সম্পর্ক করলে আমার মনে হয় সেটা হবে আপনার জীবনের সবচাইতে বড় ভুল!



মন্তব্য চালু নেই