স্কুলে যাচ্ছে মণি-মুক্তা

বছরের প্রথম দিনে স্কুল থেকে সরকারি বই পেল মণি ও মুক্তা। এর মাধ্যমে শুরু হলো তাদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন। ছয় বছর আগে দুই বোনের জন্ম হয়েছিল জোড়া লাগা অবস্থায় (কনজয়েন্ড টুইনস)। ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দুই বোনকে সফলভাবে আলাদা করেন।

এই মণি-মুক্তাই গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় বাবার হাত ধরে স্কুলে যায়। মুঠোফোনে এ কথা জানিয়ে তাদের বাবা বললেন, স্কুলে তাদের হাতে বই তুলে দেওয়া হয়। মণি ও মুক্তাকে বই দেওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় স্কুলে বই বিতরণ কার্যক্রম। আগামীকাল (আজ) থেকে তাদের ক্লাস শুরু হবে। গত ৩০ ডিসেম্বর তারা এই স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়।

গত বৃহস্পতিবার মণি-মুক্তাদের বাড়ি গিয়ে জানা যায়, পালপাড়া ব্র্যাক শিশু কেন্দ্র থেকে তারা প্রারম্ভিক শিক্ষা পর্ব শেষ করেছে। এই পর্বে মুক্তা দ্বিতীয় ও মণি তৃতীয় স্থান অর্জন করে। তাদের মা কৃষ্ণা রানী পাল গতকাল মুঠোফোনে বলেন, নতুন বই পেয়ে মনের আনন্দে বাড়ি ফেরে তারা। বাড়িতে এসেই তারা বইগুলো উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখে। তারপর ঠাকুরদার কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ পড়াশোনা করে।

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে মণি-মুক্তাদের গ্রাম শতগ্রাম পালপাড়া। গত বৃহস্পতিবার তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দুই বোন পাটি বিছিয়ে সকালের রোদ পোহাচ্ছিল। তাদের ঠাকুরদা শরত্চন্দ্র পাল বললেন, দুই বোন একসঙ্গে নাচে, গান গায়, অভিনয় করে, ছড়া বলে। গল্পের এক ফাঁকে মণি শোনায় একটি ছড়া, ‘ক য়ে কলা, খ য়ে খাই, এত বেশি খেতে নাই। গ য়ে গরু, ঘ য়ে ঘাস, কত ঘাস খেতে চাস?’ মুক্তা শোনায় অজগরের আরেকটি ছড়া।

গত ২০০৯ সালের ২২ আগস্ট দিনাজপুরের ল্যাম্ব হাসপাতালে জোড়া লাগা অবস্থায় জন্ম হয় মণি-মুক্তার। হাসপাতালের এক নার্স সনাতন পঞ্জিকা ও রাশি মিলিয়ে তাদের নাম রাখেন মণি-মুক্তা। ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ছয় মাস বয়সে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ডা. এ আর খানের নেতৃত্বে একদল চিকিৎসক অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের আলাদা করেন। গত রাতে ডা. এ আর খান বলেন, ভবিষ্যতে মনি-মুক্তা আর দশ জন সাধারণ মানুষের মতোই স্বাভাবিক জীবন যাপন করবে।

মণি ও মুক্তার বয়স এখন ছয় বছর চার মাস। মা দুই মেয়েকে একই রকম জামাকাপড় পরিয়ে রাখেন। সারাক্ষণ কপালে কালো টিপ ও মাথায় ব্যান্ড লাগিয়ে রাখেন। এদের চেহারায়ও অনেক মিল। হাতের লেখাও একই রকম। মা কৃষ্ণা বলেন, ‘দেখতে দেখতে মেয়ে দুটো বেশ বড় হয়ে গেল। দুজনের মধ্যে বেশ সখ্য। মাঝেসাঝে মারামারিও করে। মণিটা ভিতু আর মুক্তা সাহসী। মুক্তার জেদ বেশি, মণি শান্ত।’

মণি-মুক্তার বাবা জয় প্রকাশ পাল জানান, ‘ওদের তো বেঁচে থাকারই কথা না। ঈশ্বর আর মানুষের ভালোবাসা ওদের বাঁচিয়ে রেখেছে। সেই মেয়েরা স্কুলে ভর্তি হয়েছে, এর চেয়ে আনন্দের ঘটনা আর কী হতে পারে!’ শতগ্রাম পালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ধনঞ্জয় পাল শিক্ষার্থী হিসেবে মণি-মুক্তাকে পেয়ে ভীষণ খুশি।-প্রথমআলো



মন্তব্য চালু নেই