স্ত্রীকে ‘অপমান’: প্রতিবাদে ইনি যা করেছেন, তা রূপকথাকে হার মানাবে

দশরথ মাঝির কথা মনে আছে? দিনকয়েক আগে তাঁকে নিয়ে একটি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি। এই গল্প প্রায় তেমনই।

স্ত্রীকে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যেতে পারেননি। প্রতিজ্ঞা করে একটা আস্ত পাহাড় কেটে রাস্তা বের করেছিলেন দশরথ মাঝি। বাপুরাও তানজের গল্প অনেকটা সেই রকম। প্রেক্ষাপট অবশ্য আলাদা।

জাতপাতের সমস্যা এই দেশ থেকে উৎপাটিত হয়েছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে কথা বলা যায় না। তবে সুখের কথা এই যে, এ দেশে আজও মাথা তুলে দাঁড়ান বাপুজি তানজে-রা।

মহারাষ্ট্রে খরা নতুন কিছু নয়। জলের তীব্র অভাব চার দিকে। মালেগাঁও-এর কাছে একটি গ্রামে আর পাঁচঘর ‘উচ্চবংশীয়’ পরিবারের সঙ্গেই বাস দলিত বাপুজি-র। গ্রামের দলিতদের জন্য নির্দিষ্ট কুয়োর জল শুকিয়ে মাটি বেরিয়ে পড়েছিল। বাপুজি তানজের স্ত্রী গিয়েছিলেন অন্য কুয়ো থেকে জল আনতে। অভিযোগ, তাঁকে দূর-দূর করে তাড়িয়ে দেন বর্ণহিন্দু পরিবারের মহিলারা।

স্ত্রীর এই অপমান সইতে পারেননি বাপুজি। সটান চলে যান মালেগাঁও। কুয়ো খোঁড়ার জিনিপত্র কিনে ফেলেন। এর পর শুরু হয় মাটি কোপানো। যে কাজ করতে অন্তত পাঁচজন লাগে, মাত্র ৪০ দিনে সে কাজ একাই করে ফেলেছেন বাপুজি তানজে। ৪০ দিন খোঁড়ার পরে ধরিত্রী তাঁর হাতে তুলে দিয়েছে মিষ্টি জল।

এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে সংবাদমাধ্যমের ভিড় লেগে গিয়েছে বাপুজি-কে ঘিরে। তিনি বলেছেন, ‘‘প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, জলের জন্য কারও কাছে ভিক্ষা করব না। কুয়ো খোঁড়া শুরুর আগে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলাম। আমি কাজ সম্পূর্ণ করতে পেরেছি।’’

সকলে ভেবেছিলেন, তিনি পাগল হয়ে গিয়েছেন। এমনকী যে স্ত্রী-র জন্য এত কিছু, তিনিও বাপুজিকে আটকাতে গিয়েছিলেন। ‘‘কুয়ো খোঁড়া কি যার-তার কাজ’’ গোত্রের প্রশ্নও শুনতে হয়েছে। ধেয়ে এসেছে শ্লেষ, ব্যঙ্গ। কিন্তু বাপুজিকে কোনও কিছুতেই ঠেকানো যায়নি। আজ বাপুজির খোঁড়া কুয়োর সামনে ভিড়। সেই ভিড় দেখে বাপুজি আজ বলেন, ‘‘আমাকে জল ভিক্ষা করতে হয়েছে। আমার খোঁড়া কুয়োর জলে কিন্তু কোনও জাতপাতের ভাগ নেই।’’-এবেলা



মন্তব্য চালু নেই