আরেক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার, স্বামী পলাতক

স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যার পর আত্মহত্যা করল স্বামী!

স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যার পর গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন স্বামী। গতকাল বুধবার বিকেলে মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার উত্তর সেওতা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

একই দিন গাজীপুরের পূর্ব চান্দনায় আরেক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার হয়েছে। তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার পর থেকে তাঁর স্বামী পলাতক।

মানিকগঞ্জে নিহত দম্পতি হলেন সাথী সরকার (৩২) ও আশিক খান ওরফে ফারুক (৩৫)। সাথী বাউলশিল্পী ছিলেন। আশিক তাঁর সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন।

ওই দম্পতির পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রায় চার বছর আগে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার নলকুড়িয়া গ্রামের হামিদ প্রধানের মেয়ে সাথী সরকারের সঙ্গে ঢাকার ধামরাই উপজেলার আশিক খানের বিয়ে হয়। এটি সাথীর তৃতীয় ও ফারুকের দ্বিতীয় বিয়ে ছিল। প্রায় আট মাস আগে তাঁরা উত্তর সেওতা এলাকার একটি বাসা ভাড়া নেন। তাঁদের সঙ্গে সাথীর বড় বোন রানু আক্তারও থাকতেন।

সম্প্রতি আশিক ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। পাওনাদারেরা প্রায়ই বাসায় এসে চাপ দিতেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায় ঝগড়া হতো। এর জেরে গতকাল বেলা তিনটার দিকে বাসার দরজা বন্ধ করে গোসলখানায় স্ত্রীকে ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করেন আশিক। পরে তিনি নিজে বাসার বৈদ্যুতিক পাখার সঙ্গে রশি বেঁধে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। এ সময় রানু ছাদে ছিলেন। রানু কিছুক্ষণ পর ছাদ থেকে এসে বাসার দরজা বন্ধ পেয়ে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে তিনি বাড়ির মালিক আনোয়ার হোসেনকে ডেকে আনেন। তিনিও অনেকক্ষণ ধরে ডাকাডাকি করেন। এতেও দরজা না খুললে পরে তাঁরা বিষয়টি পুলিশকে জানান। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ এসে দরজা ভেঙে দুজনের লাশ দেখতে পান। পুলিশ লাশ দুটি মর্গে পাঠিয়েছে।

আত্মহত্যার আগে আশিক একটি চিরকুট লিখে যান। তাতে তিনি এই ঘটনার জন্য নিজেই দায়ী বলে লিখে গেছেন। চিরকুটটি পুলিশ উদ্ধার করেছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি ছুরিও উদ্ধার হয়েছে।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুর রহমান জানান, এ ঘটনায় সাথীর পরিবারের পক্ষ থেকে আশিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা এবং আশিকের আত্মহত্যার বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলার প্রস্তুতি চলছে।

গাজীপুরেনিহত গৃহবধূর নাম নুসরাত জাহান রুমি (১৬)। গতকাল বিকেলে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সে নওগাঁ সদর উপজেলার মো. রফিকুল ইসলামের মেয়ে। চান্দনা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল সে। পূর্ব চান্দনায় আবুল হোসেনের বাড়িতে সপরিবারে ভাড়া থাকেন রফিকুল ইসলাম। তিনি স্থানীয় একটি হোটেলে বাবুর্চির কাজ করেন। দেড় মাস আগে পাশের বাড়ির ভাড়াটে মো. হাসানকে (২৩) ভালোবেসে বিয়ে করে তাঁর মেয়ে। হাসানের বাড়ি কুমিল্লায়।

হাসান, তাঁর ভাই রাসেল ও ভাইয়ের স্ত্রী নুরজাহান পাশেই একই মালিকের অপর একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন। দুই ভাই গ্যারেজে কাজ করেন। পরিবারের অসম্মতিতে বিয়ে করায় হাসানের সঙ্গে তাঁর ভাই ও ভাবির মধ্যে প্রায়ই কলহ হতো।

পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাতের খাবার খাওয়া শেষে হাসান ও নুসরাত ঘুমিয়ে পড়েন। গতকাল দুপুরে হাসানদের ঘরে তালা দেখতে পেয়ে বাড়ির অপর ভাড়াটিয়ারা সবাইকে খুঁজতে থাকেন। কিন্তু আশপাশে কাউকে না পেয়ে তাঁরা ঘরের দরজা ফাঁক করে খাটের ওপর নুসরাতের লাশ দেখতে পান। পরে পুলিশ এসে তালা ভেঙে লাশটি উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।

হাসানের ভাই রাসেল ও ভাবি স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। ঘটনার পর থেকে তাঁরাও পলাতক।

নুসরাতের বাবা রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তিনি তাঁর মেয়েকে হত্যার খবর পেয়ে হাসানকে ফোন করেন। তখন হাসান বলেন, ‘নুসরাতকে মেরে ফেলেছি, যা করার তোমরা করো গিয়ে।’

জয়দেবপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল জলিল বলেন, গৃহবধূর নাক দিয়ে রক্ত ঝরার চিহ্ন রয়েছে। তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।



মন্তব্য চালু নেই