স্থানীয় নির্বাচন এবার দলীয়ভাবে করা ‘চ্যালেঞ্জ’

চাঁদপুর সদর পৌরসভায় মেয়র পদ, ৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ১৫টি সাধারণ কাউন্সিলর নিয়ে ২১ পদে ভোট করতে হয়।

বিদ্যমান আইনে কম প্রার্থী থাকলেও ১২টি প্রতীকের ব্যালট পেপার ছাপিয়ে রাখে নির্বাচন কমিশন। তবে যেখানে প্রার্থী ১২ জনের বেশি হবে সেখানে অতিরিক্ত প্রতীক যোগ করে ব্যালট পেপার ছাপানো হয়।

নির্দলীয় এ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হলে প্রতিটি ওয়ার্ডে আলাদা আলাদা ব্যালট পেপার ছাপাতে হবে মেয়র ও কাউন্সিলর পদের জন্য।

বর্তমানে ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে। তাছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হলে নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন নিতে হয়।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, চাঁদপুর সদর পৌরসভাটির মতো সারাদেশে অনেক পৌরসভা রয়েছে।

সেখানে এখন দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন করতে গেলে ‘জগাখিচুড়ি’ অবস্থা হবে বলে ভোট পরিচালনায় অভিজ্ঞ ইসি কর্মকর্তারা বলছেন।

উপসচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, “হাতে রয়েছে আর সর্বোচ্চ দেড় মাস। আইন সংশোধন হলে সে আলোকে বিধিমালা ও আচরণবিধি সংশোধন করা হয়ত সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচন কম সময়ে করা জগাখিচুড়ি ছাড়া কিছুই হবে না।”

এই বছর শেষে পৌরসভা এবং নতুন বছরের শুরুতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আয়োজনের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আইন সংশোধন করে স্থানীয় নির্বাচনও দলীয়ভাবে করার আলোচনাও এর মধ্যে শুরু হয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার বেশ আগেই স্থানীয় নির্বাচন দলীয় করার পক্ষে অবস্থান নিলেও তার জন্য আইন সংশোধনের কাজটি হয়নি।

এর মধ্যে উপজেলা ও সিটি নির্বাচন হয়ে গেছে, তা আইনগত ভাবে দলীয়ভাবে না হলেও আবহের দিক থেকে দলীয়ভাবেই হয়েছে।

আইন সংশোধন হলে নির্বাচন কমিশনকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করতে হবে স্বীকার করেই ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলছেন, আসন্ন ইউপি ও পৌরসভার নির্বাচনের ক্ষেত্রে কাজটি তাদের জন্য কঠিন হবে।

তিনি বলেন, “সরকার আইন সংশোধন করলে আমাদের তো সেভাবে ভোট করতে হবে।

“তবে স্বল্প সময়ে প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা তো চ্যালেঞ্জেরই হবে। এখনও সময় রয়েছে, দেখি কী হয়?”

আইন সংশোধনের প্রস্তাবটি মন্ত্রিসভার অনুমোদনের সংসদে বিল হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রতিবেদনের পর বিল পাস হবে। দীর্ঘ প্রক্রিয়া এড়াতে চাইলে অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইন সংশোধন করতে হবে। এরপর কিছু বিষয়ে বিধিমালা সংশোধন করবে ইসি।

এখনও মতামত না চাওয়ায় সার্বিক বিষয়ে ইসি কোনো সুপারিশ দেয়নি বলে সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।

ভোটের এই চিত্র ফরিদপুরের মধুখালী পৌরসভার গত নির্বাচনের

স্থানীয় নির্বাচন দলীয়ভাবে করতে নিজের অমত জানিয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. ছহুল হোসাইন বলেন, “দেখছি কোনোটাই তো আর নির্দলীয় থাকছে না।”

তবে এখন আইনে না থাকলেও দলীয় আবহমুক্তভাবে স্থানীয় নির্বাচন যে হচ্ছে না, তা স্বীকার করেন তিনি।

সবকিছুর পরও ছহুল হোসাইন মনে করেন, দলীয়ভাবে এ নির্বাচন হলে অনেক যোগ্য লোক, যারা নিজেদের নির্দলীয় দাবি করেন, তারা আর ভোটে আসবেন না।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে। সোমবার জেলা পরিষদ আইন সংশোধনের খসড়া মন্ত্রিসভায় উঠতে পারে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ সচিব (পৌর) খলিলুর রহমান বলেন, “পৌরসভায় সংশোধন আইনও মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুত করে পাঠানো হয়েছে। তবে কবে উত্থাপন হবে, তা মন্ত্রিসভার বিষয়।”

শুধু একটি পৌরসভা নয়, আইন সংশোধন হলে তিন শতাধিক পৌরসভায় দলীয়ভাবে ভোট করতে হবে ইসিকে।

আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বিদ্যমান আইনের সংশোধনী পর্যালোচনার তোড়জোড় চলছে ইসিতে। এতে যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, এ কাজ তো কয়েকদিনে করা সম্ভব নয়। মাস ছয়েক সময় দিতে হবে।

“স্থানীয় পর্যায়ে সব দল অংশ নিলে একটি পদের ব্যালট কত লম্বা হবে, তাই এখন দেখার বিষয়,” বলেন ইসির এক কর্মকর্তা।



মন্তব্য চালু নেই