স্বাধীনতার ঘোষণার প্রচার চাননি জিয়া : হাফিজ

১৯৭৫ পূর্ববর্তী সময়ে সেনাবাহিনীতে ‘গ্লানির মধ্যে থাকা’ জিয়াউর রহমান নিজেই তার ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’ প্রচার করতে চাননি বলে জানিয়েছেন তার তৎকালীন একান্ত কর্মকর্তা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। বর্তমানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মেজর (অব.) হাফিজ।

মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘৭৫ এর আগ পর্যন্ত সামরিক বাহিনীতে ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’ নামে কোনো কথাই ছিল না। যখন স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হতো, তার আগে সেনাবাহিনীর সব দফতর থেকে একটি লিখিত বক্তব্য চাওয়া হতো- তাদের কী কৃতিত্ব আছে, সে বিষয়ে।’

তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান জিয়াউর রহমানের দফতরেও চিঠি এলো। কিছু বক্তব্য আছে কি না? আমি ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে লিখে দিলাম, মেজর জিয়াউর রহমান ২৬ মার্চ বা মার্চের শেষ ভাগে কালুরঘাট কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমানের কাছে যখন লেখাটি নিলাম, তখন তিনি এটি পড়ে আমার দিকে তাকালেন এবং বললেন, এটি পাঠানো যাবে না। আমি বললাম, স্যার, কেন? তিনি বললেন, না এখন ’৭৪ সাল, তিন বছর হয়ে গেছে। তা ছাড়া এমনিতেই অনেক অসুবিধায় আছি। আমার জুনিয়রকে সেনাপ্রধান করা হয়েছে, অনেক গ্লানির মধ্যে চাকরি করি। এখন এটি লেখার দরকার নেই।’

হাফিজ উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘তার (জিয়াউর রহমান) অসহায় অবস্থা দেখে আমার খুব খারাপ লাগল। তিনি আমাকে লেখাটি কাটতে বললেন। আমি লেখাটি না কেটেই সেনা প্রধানের দফতরে জমা দিলাম। কুচকাওয়াজের দিন যখন সেটি পাঠ করা হলো, তখন বলা হলো- মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেন। অর্থাৎ ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’ কথাটি কেটে দেওয়া হলো।’

তিনি বলেন, ‘একজন মেজর স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, তারা (আওয়ামী লীগ) দিতে পারেনি। এটা কোনো দিনই সহ্য হবে না। সেজন্য ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা ১৬ ডিসেম্বর থেকেই শুরু হয়।’

জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল।

৭ নভেম্বরের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে হাফিজ উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘তখন বিভিন্ন কারণে সাধারণ সৈনিকদের মাঝে ক্ষোভ ছিল, যার সুযোগ নিয়েছে জাসদ। ’৭৫ সালের ৭ নভেম্বর রাতে ১২টায় যখন বিদ্রোহ হয়, সেখানে স্লোগান হয়, ‘সিপাহী সিপাহী ভাই ভাই, অফিসারের রক্ত চাই’। এই স্লোগান শুনে সেই মুহূর্তে অবাক হয়েছি। কি দেশ! অফিসারদের কেন হত্যা করা হবে? তাদের কী দোষ? এরপর এয়ারফোর্সে বিদ্রোহ দেখেছি। সর্বশেষ বিডিআরে ৫৭ জন অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের কী অপরাধ ছিল?’

স্বাধীনতার পর থেকে সেনাবাহিনীর অফিসার হত্যার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, দাবি করে তিনি বলেন, ‘এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে কারা জড়িত আপনারা তা জানেন। বিদেশি রাষ্ট্রের দালাল হিসেবে এ দেশের কিছু রাজনৈতিক দল এর সঙ্গে জড়িত, যাতে বাংলাদেশ মেরুদ- সোজা করে দাঁড়াতে না পারে।’

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ইসতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক, যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য রাশিদা বেগম হীরা প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতা সাদেক খান।



মন্তব্য চালু নেই