বনশ্রীতে ভাই-বোন খুন

স্বামীকে সন্দেহ করত মাহফুজা

রাজধানীর রামপুরা থানার বনশ্রী এলাকায় দুই সন্তানকে হত্যার দায় স্বীকার করে র‌্যাবকে যে কথা বলেছিলেন মাহফুজা মালেক জেসমিন, রিমান্ডের প্রথম দিনে পুলিশকে একই কথা বলেছেন তিনি। তবে তিনি তার স্বামী আমানুল্লাহকে খুব সন্দেহ করতেন- এমন কথাও বলছেন পুলিশের কাছে। স্বামী-স্ত্রী ছাড়াও তারা ছিলেন চাচাতো ভাই বোন। মানসিক হতাশা ও পারিবারিক কলহের কারণে এ হত্যাকা- ঘটতে পারে বলেও সন্দেহ করছে পুলিশ।

দুই শিশুকে দাফনের পর জামালপুর থেকে মাহফুজাকে আটক করে বৃহস্পতিবার ঢাকায় নিয়ে আসে র‌্যাব। শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। র‌্যাবের কাছে সন্তানদের ‘ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা’ থেকে নিজের স্কুলপড়ুয়া দুই ছেলে-মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন মাহফুজা মালেক জেসমিন। এমন বক্তব্যে মাহফুজার মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে র‌্যাব বলছে, তাদের কাছে মানসিকভাবে সুস্থই মনে হয়েছে এই নারীকে।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, মাহফুজা এখন রামপুরা থানায় রয়েছেন। দুজন নারী পুলিশের পাহারায় তিনি মহিলাদের হাজতখানায় রয়েছেন। ওই হাজতে অন্য কোনো নারী আসামি না থাকায় তিনি একাই অবস্থান করছেন। আজ শনিবার এখনো পর্যন্ত পরিবারের কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে আসেনি। পরিবারের পক্ষ থেকে তার জন্য কেউ খাবারও পাঠায়নি। পুলিশের বরাদ্দে থাকা রুটি, ভাজি ও ডিম দিয়ে নাস্তা করেছেন তিনি। মাহফুজা ও তার স্বামী আমানুল্লাহ সম্পর্কে চাচাত ভাই-বোন। পারিবারিক সম্মতিতে দেড় দশক আগে তাদের বিয়ে হয়েছিল। আমানুল্লাহর পোশাক শিল্পের ব্যবসা রয়েছে। স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী মাহফুজা কিছু দিন কলেজে শিক্ষকতা করলেও পরে তা ছেড়ে দেন। পুলিশের ওই সূত্রটি আরো বলেন, মাহফুজা তার স্বামীকে খুব সন্দেহ করত। তাদের মধ্যে প্রায় ঝগড়া ফ্যাসাদ লেগে থাকত। তবে হত্যাকা-ের প্রকৃত কারণ এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি।

দুই সন্তান নুসরাত আমান অরণী (১৪) ও আমান আলভী (৬) হত্যার ঘটনায় তাদের বাবা আমানুল্লাহ স্ত্রীকে আসামি করে যে মামলাটি করেছেন, তা তদন্তের দায়িত্বে রয়েছেন পরিদর্শক মুস্তাফিজুর রহমান।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমানের কাছে মামলার অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত রাতে থানায় আনার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। সে খুব স্বাভাবিকভাবে বলছে, সন্তানদের পড়াশোনা নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকায় তাদের হত্যা করেছি।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রামপুরার বনশ্রীর বাসা থেকে অরণী ও আলভীকে অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর পরিবারের পক্ষ থেকে খাবারে বিষক্রিয়া সন্দেহের কথা বলা হয়েছিল। পরদিন ময়নাতদন্তে চিকিৎসকরা শ্বাসরোধে হত্যার আলামত পান। এরপর র‌্যাব-পুলিশ ঘটনার তদন্তে নামে। র‌্যাব বলছে, ওই বিকালে দুই সন্তানের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেন মাহফুজা।



মন্তব্য চালু নেই