স্বামীরা পরকীয়ায় জড়ালে কেন স্ত্রীদেরই দোষ দেওয়া হয়?

দম্পতিদের সম্পর্কে কালো মেঘ ছেয়ে যায় যখন কেউ একজন অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। সম্পর্ক ভাঙনের অন্যতম শক্তিশালী কারণ হিসাবে পরকীয়াকে বিবেচনা করা হয়। এখানে ভিন্ন একটি বিষয় তুলে ধরেছেন বিশেষজ্ঞরা। যদি স্বামী অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, তবুও কেন স্ত্রীকেই দোষারোপ করা হয়? এ ক্ষেত্রেও মনে করা হয়, স্বামী অন্য স্ত্রীর সৌন্দর্যের শিকার হয়েছেন। অর্থাৎ, স্ত্রী স্বামীর সামনে আকর্ষণীয় থাকতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।

সম্প্রতি দুজন স্কটিশ সংসদ সদস্য একই নারীর প্রেমে পড়েন। এ ক্ষেত্রে বলা হয়, তারা দুজনই ওই নারী সেরেনা কাউডির সৌন্দর্যের শিকার হয়েছেন। স্কটল্যান্ডের ওই সাংবাদিক নারী সুন্দরী এবং যৌন আবেদনময়ী। তিনি নিজের জায়গা পোক্ত করতে দুই সংসদ সদস্যের শয্যাসঙ্গী হন। এ প্রসঙ্গটি তুলে এনেছেন সাংবাদিক জুডিথ উডস।

এসএনপি দলের ৫৩ বছর বয়সী ডেপুটি লিডার স্টিউয়ার্ট হোসি এবং তার সহকর্মী ৪৫ বছর বয়সী আনগান ম্যাকনিল খুব সহজেই কাবু হন ৩৬ বছর বয়সী সেরেনার প্রেমে।

তেমনই এক সাংবাদিক সারাহ ভাইনের কথা মনে রেখেছে মানুষ। সত্তর দশকের সেই নারী ছোট ব্লাউজ, ছোট স্কার্ট এবং লেসের পোশাক পরতেন। তিনি অন্য নারীর স্বামীদের শিকার করতে বেশ পটু ছিলেন।

এই দুই সংসদ সদস্য কৌশলের মাস্টার হতে পারেন। তারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বটে। কিন্তু একজন পুরুষ হিসাবে তাদের সহজেই শিকার করতে পারেন কোনো নারী। মধ্যবয়সী এসব পুরুষদের স্বার্থের কারণে নিজের অধীনে আনতে এ ধরনের নারীদের সংখ্যাধিক্য রয়েছে। এমন পুরুষরা দামি হোটেলের কামড়া ভাড়া করে, দামি উপহার প্রদানের মাধ্যমে সহজেই ওই নারীদের কাছে নিজেদের উৎসর্গ করেন। এদের স্ত্রী-সংসার থেকে মুখ ফেরাতে সন্তানবিহীন আবেদনময়ী কাউডির মতো নারীদের খুব বেশি কাঠখড় পোড়াতে হয় না।

কিন্তু যে দুজন পুরুষ এমপি এ কাজ করলেন, স্ত্রীদের প্রতি তাদের বক্তব্য কি হবে? তারা নিজেদের দোষত্রুটি কোনোভাবেই স্বীকার করতেও প্রস্তুত নন। তাহলে তাদের ওপর দোষ কিভাবে আসতে পারে?

কাউডি তাদের ওপর কোনো জাদুটোনা নিশ্চয়ই করেননি। তারা এ সম্পর্কে জড়াতে মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়েই থাকেন। অথচ এমন ঘটনায় উল্টো তাদের স্ত্রীদেরই দোষ খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ তারা স্বামীকে ধরে রাখতে ব্যর্থ। রাজনীতির এই দুনিয়ায় নারীরা বরাবরেই মতোই নিগৃহীত হয়ে চলেছেন।

দাম্পত্য জীবনে নানাভাবে বিতৃষ্ণা চলে আসতে পারে। একঘেয়েমি, যৌন আকাঙ্ক্ষার অভাব, একাকিত্ব বোধ ইত্যাদি কারণে এমনটা হতেই পারে। এ ছাড়া যৌনজীবনে পুরুষের কুরুচিকর চাহিদা থাকলেও সমস্যা দেখা দেবে।

একজন পুরুষ যখন কোনো নারীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তার প্রতি আসক্ত হন, তার অর্থ এই নয় যে ওই পুরুষের স্ত্রী তার সৌন্দর্য ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। মূলত পুরুষের যৌন চাহিদার ফলাফল এটি যা তিনি যেকোনো নারীর প্রতিই অনুভব করেন।

এ পরিস্থিতি সামাল দিতে একটা সময় নারীদের উৎসাহ দেওয়া হয় নিজেকে আড়ালে রাখতে। এরপর তা নির্দেশ আকারে আসে। কিন্তু এটা কি সমাধান? ঘরের স্ত্রী-কন্যার ওপর এমন নির্দেশ আসে যেন তারা সাবধানে

থাকেন। কাজেই কি ধরে নেওয়া যায়, পুরুষদের অন্য নারীর প্রতি যৌন আকাঙ্ক্ষার বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই মেনে নেওয়া যেতেই পারে?

এখন রাজনীতিকদের এমন কেলেঙ্কারি থেকে দূরে রাখতে কি নারীদের এ খাত থেকে সরিয়ে নিতে হবে? তাদের কি ড্রেসকোড মেনে চলতে হবে? আসল দুই দিক থেকেই আন্তরিক হতে হবে। নয়তো এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে এবং কেলেঙ্কারির অন্ত থাকবে না।

সূত্র: টেলিগ্রাফ



মন্তব্য চালু নেই