স্বামী ফিল্মি হিরোর মতো ‘স্মার্ট’ নয়, নালিশ নিয়ে থানায় হাজির নববধূ, তারপর কী হলো?

স্বামী ফিল্মি হিরোদের মতো স্মার্ট নয়। চুলে দামি জেলের সুগন্ধ নেই। নেই পেশিবহুল শরীর। এমনকী মনকাড়া রোমান্টিকতা! তা-ও নেই। ফলে বরের মধ্যে স্বপ্নের রাজপুত্রকে খুঁজে না পেয়ে বিয়ের ২৩ দিনের মাথায় শ্বশুরবাড়ি থেকে পালিয়ে সটান থানায় হাজির ‘বালিকাবধূ’৷ ওসি-র পায়ে হত্যে দিয়ে তার দাবি, “আমাকে বাঁচান। শ্বশুরবাড়ি ফিরতে চাই না। আমাকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

শনিবার রাতে ভারতের এনজেপি থানায় এমন ঘটনায় ভ্যাবাচাকা পুলিশও। মেয়েটির কথাবার্তা শুনে কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না ওসি দীপাঞ্জন দাস৷

এরই মধ্যে মেয়েটি দাবি করে, তার বয়স মাত্র ১৪৷ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে৷ তবে কয়েক বছর আগে স্কুলের পাট চুকিয়ে বাড়িতেই ছিল৷ ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ ওই বর পছন্দ নয় তার৷ শ্বশুরবাড়ির লোকেরাও বড্ড খারাপ৷ এদিকে, মেয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে পালিয়ে থানায় গিয়ে উঠেছে, এ খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই থানায় এসে হাজির হন তার মা৷ বড়বাবুকে অনুরোধ করেন মেয়ের কথায় আমল না দিতে৷ কিন্তু ওই মহিলার কথায় গুরুত্ব না দিয়ে নাবালিকা মেয়েকে জোর করে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগে তাঁকে আটক করে পুলিশ৷ পরে অবশ্য মেয়েটির মা-কে ছেড়ে দেওয়া হলেও গোটা বিষয়টি চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটিকে খতিয়ে দেখতে বলেছেন পুলিশকর্তারা।

শিলিগুড়ির এসিপি অচিন্ত্য গুপ্ত বলেন, “মেয়েটি নাবালিকা হওয়ায় চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি বিষয়টি দেখছে৷ তাদের দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হবে৷ মেয়েটি শ্বশুরবাড়ি ফিরবে না বলে জানিয়েছে৷ তাকে আপাতত হোমে রাখা হয়েছে৷” দার্জিলিং জেলা শিশুকল্যাণ আধিকারিক মৃণাল ঘোষ বলেন, “সোমবার মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।”

জানা গিয়েছে, এনজেপির সাউথ কলোনিতে বাড়ি মেয়েটির বিয়ে হয় তিন কিলোমিটার দূরে ডিএস কলোনিতে৷ বরের একটি মুদি দোকান রয়েছে৷ মেয়েটির বাবা নেই৷ তাঁরও স্থায়ী কোনও কাজ নেই৷ অথচ অভাবের সংসারে মেয়ের শখ পূরণ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হত, বলেন ওই তার মা৷ মেয়ে হিন্দি সিনেমা, সিরিয়ালের পোকা বলে জানিয়েছেন মা৷ বলেন, সিনেমার নায়িকাদের মতোই হেয়ারকাট, ড্রেসের নেশা তার৷ ক্রমেই উচ্ছৃঙ্খল হয়ে ওঠায় একপ্রকার অতিষ্ঠ হয়েই ১৮ বছর হওয়ার আগেই মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন৷ কিন্তু বিয়ের ২৩ দিনের মাথায় মেয়ে যে কাণ্ড ঘটাল, তাতে শেষপর্যন্ত কী হবে ভেবে পাচ্ছেন না তিনি।

থানায় মেয়েটি তার ১৪ বছর বয়স বলে দাবি করলেও তার মা-র দাবি, ওর বয়স এখন ১৭ বছর৷ এদিকে, শনিবার রাতের ঘটনার পর মা জানতে পেরেছেন, দু’-দিন আগেই তাঁর মেয়ে নাকি এক বন্ধুকে বলেছিল, “বর একেবারেই স্মার্ট নয়৷ এক্কেবারে বোকা-হাঁদা৷ খৈনি খায়৷ তাই তাঁর সঙ্গে থাকব না৷” যদিও থানায় পুলিশের কাছে মেয়েটি বলেছে, শুধু বর স্মার্ট না হওয়ার জন্যই যে বাড়ি থেকে পালিয়েছে, তা নয়৷ শ্বশুরবাড়িতে তাকে মারধর করা হত৷ গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷ চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর মেয়েটির স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গেও কথা বলা হবে বলে জানিয়েছেন ওসি দীপাঞ্জন দাস। -সংবাদ প্রতিদিন।



মন্তব্য চালু নেই