স্মার্টকার্ড বিতরণে আরো ১৮ মাস সময় পেল ইসি

নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশের সব ভোটারের হাতে উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র- স্মার্টকার্ড সরবরাহ করা সম্ভব নয়। তাই স্মার্টকার্ড বিতরণে অতিরিক্ত সময় চেয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহেন্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। ফলে, স্মার্টকার্ড বিতরণে আরো ১৮ মাস সময় পেল ইসি।

বৃহস্পতিবার ইসির সিনিয়র সহকারী প্রধান মো. সাইফুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত আইডিইএ প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির অনুমোদন সংক্রান্ত একটি চিঠি প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা সিঅ্যান্ডএজি, ইসি ও পিএসসি বরাবর পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশনের বাস্তবায়নাধীন আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহেন্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ানো ছাড়া আগামী ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে এ আদেশ জারি করা হলো।’

এর আগে আগস্টে ইসির সিনিয়র সহকারী সচিব মো. সাইফুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত আইডিইএ প্রকল্পের ১৮ মাস সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব বরাবর চিঠি পাঠানো হয়। সেই প্রস্তাবে ইসি সচিবালয় বাস্তবায়নাধীন আইডিইএ প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই তার মেয়াদ ১৮ মাস অর্থাৎ জুন ২০১৬ এর পরিবর্তে ডিসেম্বর ২০১৭ বৃদ্ধির করার জন্য বলা হয়।

পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো ওই চিঠিতে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে আইএমইডির চাওয়া তিনটি প্রশ্নের উত্তরও পাঠনো হয়। প্রশ্নগুলো হলো- প্রকল্পের আওতায় স্মার্ট (এনআইডি) উৎপাদনের জন্য চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বর্তমানে সমঝোতা হয়েছে কিনা, প্রকল্প বাস্তবায়নে অতিরিক্ত ১৮ মাস কেন প্রয়োজন হবে তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা এবং উল্লেখিত সময়ের জন্য কোনো ব্যয় বৃদ্ধি হবে না- এ মর্মে নিশ্চয়তা প্রদান।

দাতা সংস্থাকে অবহিত করা হয়েছে- সময় বাড়ানো হলেও এতে কোনো ব্যয় বাড়বে না এবং প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর কারণ উল্লেখ করে বলা হয়েছিল, নির্দিষ্ট সময়ে স্মার্টকার্ড তৈরি করা গেলেও ওই সময়ের মধ্যে সাড়ে ৯ কোটি নাগরিকের হাতে তা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে না। এ কারণে মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বলে আইএমইডির প্রশ্নের জবাব দেয় ইসি।

পাঠানো প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছিল, আইডিএ প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে, দেশের সব নাগরিদের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেয়া ও ডাটাবেজ ব্যবহার করে আইডি ভেরিফিকেশন সেবা নিশ্চত করা। সে কারণেই এ সেবা নিশ্চিত করার জন্য ১৮ মাস সময় বাড়ানো প্রয়োজন। ইসির পাঠানো প্রস্তাবে আইএমইডির মূল্যায়নের পর পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পটির সময় ১৮ মাস বাড়িয়ে দেয়।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীন বলেন, ‘আমরা শিগগির স্মার্টকার্ড তৈরির কার্যক্রম শুরু করবো। এ প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করায় কার্ড বিতরণের সময়ও বেশি পাওয়া যাবে। এতে কাজটি আরো ভালোভাবে করা যাবে। প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো না হলে তাড়াহুড়ো করে কাজ শেষ করতে হতো।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের সব নাগরিকের হাতে নির্ভুল স্মার্টকার্ড তুলে দিতে চাই। সে জন্য এরই মধ্যে কারো এনআইডিতে কোনো তথ্য ভুল থাকলে তা সংশোধন করতেও বলা হয়েছে।’

ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আইডিইএ প্রকল্পের আওতায় ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে সাড়ে নয় কোটি নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেয়ার কথা। এজন্য চলতি বছরের আগস্টে উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু স্মার্টকার্ড উৎপাদন কাজ শুরু করতে না পারায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নাগরিকের মাঝে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেয়া নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। ফলে ইসি সময় বাড়ানো আবেদন করা হয় বলে জানান কর্মকর্তারা।

প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহায়তায় আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১১ সালের জুলাইয়ে। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৩৭৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা। এছাড়া, ১৪ জানুয়ারি স্মার্টকার্ড প্রস্তুত ও বিতরণের জন্য ফ্রান্সের ওবার্থার টেকনোলজিস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে ইসি। এরপর থেকেই কমিশন বিভিন্ন সময় স্মার্টকার্ড বিতরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে। বারবার কথা দিলেও নিজেদের ব্যর্থতার কারণে এখন পর্যন্ত বহুল আকাঙ্ক্ষিত সেই স্মার্টকার্ড কোনো নাগরিককের হাতে দেয়া তো দূরে থাক, তৈরিও করতে পারেনি। অথচ ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে কার্ড ‍বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করার কথা ছিল। কিন্তু তখনো কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি না হওয়ায় কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি ইসি।

ইসি ফ্রান্সের ওবার্থার টেকনোলজিসের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের পর গত ২৬ মার্চ অর্থাৎ স্বাধীনতা দিবসে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কার্ড বিতরণের ঘোষণা দেয় ইসি। এ উদ্যোগটিতেও ব্যর্থ হলে বাঙালির বর্ষবরণ উৎসব পহেলা বৈশাখে কার্ড বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়। সে সিদ্ধান্তও আলোর মুখ দেখতে পারেনি।

বর্তমানে সারাদেশে ৯ কোটি ৬২ লাখ ২৬ হাজার ৫৪২ জন ভোটার আছে। সেই সঙ্গে চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদে নতুন ৭২ লাখ নাগরিককে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।



মন্তব্য চালু নেই