স্মার্টফোন যেভাবে আপনার স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে

আজকাল পরিবারের সদস্যদের বা একদল বন্ধুদের একত্রে একসাথে বসে থাকতে দেখলেও তাদের মাঝে কথা বলার পরিবর্তে মোবাইল ফোনের ছোট স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতেই দেখা যায় বেশি। বর্তমান ডিজিটাল যুগে স্মার্টফোনের আসক্তি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে দীর্ঘ সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করলে বিভিন্ন প্রকার দৈহিক ও মানসিক সমস্যা হয়। দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর স্মার্টফোনের ক্ষতিকর প্রভাবের কথাই আজ জেনে নিব আমরা।

১। আমরা সবাই জানি সুস্থ থাকার জন্য একজন মানুষের দৈনিক ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। কিন্তু রাতে বিছানায় স্মার্টফোন নিয়ে শুতে গেলে ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে চোখ বুলাতে যেয়ে রাত ৩ টার আগে ঘুম হয়না অনেকের, বিশেষ করে টিনএজারদের। গবেষণায় দেখা গেছে যে দীর্ঘক্ষণ স্মার্টফোনে সময় ব্যয় করা সরাসরি ইনসমনিয়ার সাথে সম্পর্কিত। তাই ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনার ফোনটি বিছানা থেকে দূরে ও সাইলেন্ট করে রাখুন।

২। ঘুমের সমস্যা ছাড়াও আপনার স্মার্টফোনের কারণে আপনার মানসিক সমস্যা যেমন- বিষণ্ণতা ও উদ্বিগ্নতার সৃষ্টি হতে পারে। ২০১৫ সালে বিহ্যাভিয়ারাল অ্যাডিকশন্স নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয় যে, যারা দীর্ঘক্ষণ যাবত স্মার্টফোন ব্যবহার করেন তাদেরকে বিষণ্ণতা ও উদ্বিগ্নতায় ভুগতে দেখা যায় বেশি।

৩। দৈনিক ৬ ঘন্টার বেশি স্মার্টফোন ব্যবহার করলে আঙ্গুল ও কব্জির উপর চাপ পড়ে। ফলে “স্মার্টফোন পিঙ্কি” নামক সমস্যাটি তৈরি হয়। যার ফলে আপনার আঙ্গুলের উপর একটি ব্যান্ড তৈরি হতে দেখবেন। এছাড়াও আপনার বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কব্জি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ঝুঁকিও সৃষ্টি হয়। এই সমস্যাগুলো এড়াতে চাইলে স্মার্টফোনে অধিক সময় ব্যয় করা কমিয়ে দিন।

৪। গবেষণায় দেখা গেছে যে স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে গালে ও কানের আশেপাশের ত্বকে যন্ত্রণা বা ডার্মাটাইটিসের সৃষ্টি হতে পারে। এই সমস্যা হওয়ার কারণ হচ্ছে কিছু ফোনে অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান যেমন- নিকেল, ক্রোমিয়াম এবং কোবাল্ট থাকে। ব্ল্যাকবেরি ও ফ্লিপ ফোনে এই ধরণের ধাতু থাকার সম্ভাবনা বেশি।

৫। স্মার্টফোনের স্ক্রিনের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে চোখের বিভিন্ন ধরণের সমস্যা যেমন- চোখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া, দৃষ্টি ঘোলা হওয়া, চোখ লাল হয়ে যাওয়া এবং চোখে জ্বালাপোড়ার মত সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। স্মার্টফোন আসক্তদের মধ্যে এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোর কোন না কোনটি দেখা যাওয়া নিশ্চিত।

৬। ডার্মাটোলজিস্টদের মতে স্মার্টফোন ত্বকের শত্রু হিসেবে কাজ করে। তাই অসময়ে বয়স বৃদ্ধির ছাপ পড়ে চেহারায়। কারণ আপনি যখন স্মার্টফোন ব্যবহার করেন তখন দীর্ঘক্ষণ আপনার ঘাড় বাঁকানো থাকে ফলে ঘাড়ের মাসল কমতে থাকে এবং ত্বকে টানের সৃষ্টি হয়। ফলে ত্বক ঝুলে পড়ে ও বলিরেখা সৃষ্টি হয়।

৭। আমেরিকার ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের করা এক গবেষণায় জানা যায় যে, দীর্ঘক্ষণ স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে অনেক বেশি অমনোযোগিতা এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে হাইপারঅ্যাক্টিভিটি বা অস্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের প্রবণতা দেখা দিতে পারে। এই ধরণের উপসর্গকে অ্যাটেনশন ডিফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিজঅর্ডার(ADHD) বলে।

৮। স্মার্টফোন আপনার সম্পর্কের ক্ষেত্রেও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অনবরত ম্যাসেজ করা, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সময় ব্যয় করা এবং ফোনে অনবরত কথা বলার ফলে সঙ্গীর সাথে ভুলবোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। অনেক ক্ষেত্রে সম্পর্কছিন্ন করার মত পরিস্থিতি ও সৃষ্টি হতে পারে।

এতোসব সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে যে স্মার্টফোন তার ব্যবহার কি কমানো উচিৎ নয়? চিন্তা করে দেখুন এবং নিজের সুস্থতার জন্য শুধুমাত্র প্রয়োজনের খাতিরে ব্যবহার করুন স্মার্টফোন।



মন্তব্য চালু নেই