স্যার গো স্যার, আমরা এখন ক্যামনে যামু?

বুধবার দুপুরে গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তার ট্রাফিক বক্সে এসে হাই হাউ মাউ করে কাদঁতে শুরু করেন দুইজন নারী। তখন ট্রাফিক বক্সে ছিলেন ট্রাফিক বিভাগ গাজীপুরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সাখাওয়াত হোসেন, ট্রাফিক সার্জেন্ট ওমর ফারুক, ট্রাফিক পরিদর্শক আলম।

ট্রাফিক বিভাগ গাজীপুরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সাখাওয়াত হোসেন জানতে চাইলে মহিলা বলেন, স্যার গো স্যার, আমাগো একটু সাহায্য করেন। আমাগো মহাখালি পর্যন্ত নামায় দেয়ার কথা। হেই জন্য ভাড়াও নিছে ১৫০ টাকা। কিন্তু আমাগো এহন এই হানে চৌরাস্তায় নামায় দিছে। আমরা এখন ক্যামনে যামু।

এসময় আরো কিছু লোকজন চলে আসলো সেখানে। সবারই একই অভিযোগ। যাওয়ার কথা মহাখালি। নামিয়ে দিয়েছে চৌরাস্তায়। কিন্তু কেউ গাড়ির নাম্বার বলতে পারছে না। শুধু শেরপুরের গাড়ি, জেবি পরিবহন, এই টুকু তথ্য দিতে পেরেছে তারা।

সাখাওয়াত হোসেন সঙ্গে সঙ্গে পাশে দাড়াঁনো ট্রাফিক সার্জেন্ট ওমর ফারুকের দিকে তাকালেন এবং সিনেমার মত সে বুঝতে এক সেকেন্ডও সময় নিল না। কিছু বলার আগেই সে ট্রাফিক বিভাগ গাজীপুরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সাখাওয়াত হোসেনকে বলল, স্যার আমি মটরসাইকেল নিয়ে ধাওয়া করি। দেখি কতদূর গেছে? ব্যাটাদের শায়েস্তা না করলেই নয়।

তখন একমুহূর্ত দেরি না করে বের হয়ে পড়লেন সার্জেন্ট ওমর ফারুক। যেহেতু যাত্রী সব নামিয়ে দিয়ে গেছে আবার ইউটার্ণ করে ঘুরে আসতে পারে এই জন্য চৌরাস্তার দুই পয়েন্ট এ দুই সহকারী সার্জেন্ট (এটিএসআই) কে দাঁড় করালেন সাখাওয়াত হোসেন।

এসময় যেকোন মূল্যে গাড়িটি আটকানোর জন্য সামনের দিকের সব ট্রাফিক পয়েন্টে ওয়্যারলেস যোগে খবর দিলেন সাখাওয়াত হোসেন। ধাওয়া করে ভোগড়া মোড় পর্যন্ত গিয়েও সিগনালে গাড়ি না পেয়ে পেট্রোল পাম্পগুলোতে খোজঁ শুরু হলো। অবশেষে এক পেট্রোল পাম্প এর এক কোণা থেকে গাড়িসহ চালক ও হেলপারকে ধরে আনা হলো।

আমাদের মাফ করে দেন বলে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো ড্রাইভার আর হেলপার। এসময় সাখাওয়াত হোসেন বলল, উনাদের কাছে মাফ চাও। মায়ের বয়সী মহিলাদের সাথে যে অন্যায় আর প্রতারণা করছো সেটা তারাই মাফ করতে পারেন।

পরে ওই নারীদের হাতে পায়ে ধরে মাফ চেয়ে ক্ষমা চাইল তারা। কিন্তু মহিলারা তখনও কাদঁছে। পরে তাদের ভাড়ার সব টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ দিলে তারা টাকা ফেরত দেয়। ওই নারীরা টাকা ফেরত পেলেন কিন্তু ক্ষমা করলেন কিনা বুঝা গেলো না। পরে সাখাওয়াত হোসেন তাদেরকে মহাখালীর বাসে তুলে দিল। এরপর গাড়িটি আটক করে ডাম্পিং স্টেশনে পাঠিয়ে দিয়ে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন সাখাওয়াত হোসেন।

ঘটনার পর সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পুলিশের চাকরি মানবিক দিক বিবেচনা করতে হয়। মানুষ বিপদে পড়লে পুলিশের কাছে আসে। দায়িত্ব, কর্তব্য, মানবিকতা সবদিক বিবেচনা করেই এ কাজটি করা।



মন্তব্য চালু নেই