সড়কে গাড়ি আটকিয়ে পথচারীদের ইফতার করায় এই গ্রামের মানুষ

আলহামদুলিল্লাহ, পথচারীদের ইফতার করায় এই গ্রামের মানুষ, যারা সূর্য হেলে পড়তেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন বাড়ির উঠানে গালিচা বিছাতে।

সুদানের আল-নুবা গ্রাম। এই গ্রামে পবিত্র রমজান মাসের বিকেলটা অন্য সময়ের চেয়ে ভিন্ন। সূর্য হেলে পড়তেই পুরো উঠানজুড়ে গালিচা বিছানোর পর শুরু হয় ইফতার সাজানোর পালা।

ভিন্ন স্বাদের পানীয় আর সবজি-গোশত ও বিশেষ ধরনের কেক দিয়ে সাজানো হয় বড় বড় থালা। এর পর বাসিন্দারা ছুঁটতে থাকেন প্রধান সড়কের দিকে।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা সড়কের মাঝখানে গিয়ে যানবাহন থামাতে থাকে। একজন গিয়ে বাস থামান আর আরেকজন গিয়ে বাসের ড্রাইভারকে গাড়ি পার্ক করার জায়গা দেখিয়ে দেন।

একজন যাত্রীদের ইফতার মাহফিলের জায়গার পথ দেখান। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়কের মাঝখানে বাস থামানো ব্যক্তি বলতে থাকেন, ভাইয়েরা ইফতারের সময় হয়েছে। আসুন, আমাদের সাথে ইফতার করুন।

ইফতারের সময় যত ঘনিয়ে আসতে থাকে আল-নুবার বাসিন্দাদের অস্থিরতাও তত বাড়তে থাকে। পর্যটক ও পথচারীদের সেবায় যাতে কোনো ত্রুটি না হয় সেদিকটায় সতর্ক থাকেন তারা।

গালিচায় ইফতার সাজানো, সম্মানের সাথে তাদের ইফতার বিছানো গালিচায় বসানো, সামনে ইফতার দেয়া- সবই চলতে থাকে শৃঙ্খলার সাথে। ইফতারের ২০ মিনিট পর পর্যটক ও পথচারীদের সম্মানের সাথে আবার বাসে তুলে দেয়া হয়।

পর্যটকরা বুঝতে পারেন, মুসলমানদের কাছে পবিত্র রমজান শুধু সংযমের মাস-ই নয়, প্রার্থনা, দান আর ক্ষমার মাসও। সাধারণত মুসলমানরা পারিবারের সবাইকে নিয়ে ইফতার করেন।

কিন্তু সুদানের জাজিরা প্রদেশের এ গ্রামের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। অতিথি রোজাদারদের আপ্যায়নে কোনো ত্রুটি যাতে না হয় সেদিকে খুব খেয়াল রাখে।

আল-নুবা গ্রামের ১৬০ কিলোমিটার খার্তুম-ওয়ার্দ মাদানি মহাসড়কের পাশের বাসিন্দাদের বলা যায়, একপ্রকার জোর করেই গাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের ইফতার করান।

ইব্রাহিম আব্দেল রহিমের বাড়ি এ মহাসড়কের পাশেই। পেশায় চিকিৎসক তিনি। প্রতিদিন এ পবিত্র দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি বলেন, পথচারী ও পর্যটকদের ইফতার করানো আমাদের গ্রামের ঐহিত্য। যখন ইফতারের সময় হয়, আমরা চেষ্টা করি গ্রামের পাশ দিয়ে যাওয়া সব যানবাহন থামাতে।

ইব্রাহিম আব্দেল রহিম বলেন, তাদের অনেুরোধ করি আমাদের সাথে ইফতার করার জন্য। ইফতারে বিশেষ ধরনের কেক পরিবেশন করা হয়। এই আন্তরিক আতিথিয়তায় মুগ্ধ অতিথিরাও।

তাদের সাথে ইফতার করা এক বাসচালক বলেন, তারা মাঝ রাস্তায় এসে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন। পুরো রাস্তা বন্ধ করে দেন। গাড়ি থামাতে বাধ্য করেন। এরপর যাত্রীরা গাড়ি থেকে নেমে তাদের সাথে ইফতার করে। এরপর আবার যাত্রা শুরু করে।

ইফতারে সাহায্যকারী ২০ বছরের এক তরুণ বলেন, আমরা ছোটদের কিছু কাজ দেই। কেউ হয়তো গালিচা বিছায়, আবার কেউ খাবার নিয়ে আসে। কাউকে পাঠাই রাস্তায় গাড়ি থামাতে।

উল্লেখ্য, আল-নুবা গ্রামের বাসিন্দাদের সংখ্যা আনুমানিক দশ হাজার। তারা পেশায় কৃষক এবং সরকারি চাকরিজীবী।

বছরের পর বছর ধরে এ গ্রামে পথচারী ও পর্যটকদের উফতার করার প্রচলন চলে আসছে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর বাড়ির ছোটদের এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

তারা বড়দের সাথে এ কাজে হাত লাগান। ছোটবেলা থেকেই তাদের মনে গেঁথে যায় পথচারীদের ইফতারি করানোর। বড় হয়ে তারাও সেই পথে হাঁটেন।



মন্তব্য চালু নেই