হলমার্ক জালিয়াতি : জনতা ব্যাংকের ৫ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ

হলমার্ক কেলেঙ্কারির নন-ফান্ডেড অংশের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় জনতা ব্যাংকের এসিস্টেন্ট জেনারেল ম্যানেজারসহ (এজিএম) ৫ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সকাল সাড়ে ১১টায় তা‌দের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। দুদকের পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বাধীন এক‌টি টিম তাদের জিজ্ঞাসাবাদ কর‌ছে। জিজ্ঞাসাবাদ বি‌কেল পর্যন্ত চলবে দুদক সূত্রে জানা গে‌ছে।

যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তারা হলেন— জনতা ব্যাংক কর্পোরেট শাখার এসিস্টেন্ট জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) আব্দুল্লাহ-আল-মামুন, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার মো. সাখাওয়াত হোসেন, এক্সিকিউটিভ অফিসার মোছা: জেসমিন খাতুন, এক্সিকিউটিভ অফিসার জিনিয়া জেসমিন ও সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (ম্যানেজার, রপ্তানী) জেসমিন আখতার।

এর আগে ২০১৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর ওই কর্মকর্তাসহ মোট ৯ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে তলব করেছিল দুদক। ওই বছরের ২২ ডিসেম্বর হলমার্ক কেলেঙ্কারির নন-ফান্ডেড অংশের (দ্বিতীয় অংশ) প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধানে টিম পুনর্গঠন করা হয়।

সোনালী ব্যাংকের হোটেল শেরাটন শাখা থেকে হলমার্ক গ্রুপসহ ৬টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ইস্যুকৃত ব্যাংক-টু-ব্যাক এলসি’র এক্সেপ্টেন্সের বিপরীতে নন-ফান্ডেড দায় সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানে টিম পুনর্গঠন করে কমিশন।

দুদকের পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বাধীন ৬ সদস্যের এই টিমে রয়েছেন- দুদকের উপ-পরিচালক এস এম এম আখতার হামিদ ভূঁঞা, সহকারী পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত, সেলিনা আখতার মনি, উপ-সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন ও রাফী মো. নাজমুস্ সাদাৎ।

হলমার্কের নন-ফান্ডেড অংশের এ অভিযোগ কমিশনের ‘সিডিউলভুক্ত অপরাধের’ তালিকায় থাকা সত্ত্বেও অজ্ঞাত কারণে দীর্ঘদিন এ অনুসন্ধান কার্যক্রম বন্ধ ছিল। প্রায় দেড় বছর অনুসন্ধান বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের আগস্ট মাসে এ অনুসন্ধান পুনরায় শুরু করার নানা জটিলতায় অনুসন্ধানের কাজে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

এ বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা যায়, হলমার্ক ও তার পাঁচ সহযোগী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ফান্ডেড, নন-ফান্ডেডসহ মোট তিন হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ছিল। এর মধ্যে ফান্ডেড অংশের তদন্ত শেষ করেছে কমিশন। এ অংশে দায়ের করা মোট ৩৮টি মামলার বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মামলাগুলোর চার্জশিট ইতোধ্যেই আদালতে দাখিল করেছে। কিন্তু নন-ফান্ডেড অংশের অনুসন্ধান কাজ অজ্ঞাতকারণে বন্ধ ছিল।

পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত রিপোর্টের সূত্র ধরে ২০১৪ সালের ১৩ মে পুনরায় অনুসন্ধানের ঘোষণা দেয় কমিশন।

সূত্র আরও জানায়, ৩৭টি ব্যাংকের ১২০টি শাখায় হলমার্কের নন-ফান্ডেড অংশের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে। এ সব ব্যাংক থেকে হলমার্ক নগদ হাতিয়ে নিয়েছে এক হাজার ৫৩৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। নন-ফান্ডেড অংশের জালিয়াতিতে আক্রান্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সরকারি সাতটি, বেসরকারি ২৫টি ও বিদেশি পাঁচটি ব্যাংক রয়েছে। এসব ব্যাংকর সঙ্গে হলমার্ক সুতা, তুলা, ফেব্রিক্স এবং এক্সেসরিস সরবরাহ করেছে মর্মে জালিয়াতি করা হয়েছে।

সরকারি সাত ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক, কৃষি, সোনালী ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক।

বেসরকারি ২৫টি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- প্রিমিয়ার, ব্র্যাক, ন্যাশনাল, ইউসিবিএল, ওয়ান, সিটি, উত্তরা, প্রাইম, ইসলামী, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, মার্কেন্টাইল, যমুনা, শাহজালাল, আল-আরাফা, সাউথইস্ট, এনসিসি, এসআইবিএল, এক্সিম, আইএফআইসি, ট্রাস্ট ব্যাংক, পূবালী, ডাচ্-বাংলা, ঢাকা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া ও এবি ব্যাংক।

বিদেশি ৫টি ব্যাংকের মধ্যে রেয়েছে- স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক লিমিটেড, ব্যাংক আল-ফালাহ লিমিটেড ও এইচএসবিসি ব্যাংক লিমিটেড।



মন্তব্য চালু নেই