হাই-ভোল্টেজ সফরে সঙ্গী মাত্র ২৪

ছোট একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে ঢাকা সফরে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি। এ সফরে মাত্র ২৪ জন সঙ্গী থাকছেন তার।

এরপরও এ সফরকে হাই-ভোল্টেজ বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল। কারণ, এই সফরে তিস্তা চুক্তি না হলেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে একটি চমক রেখে যাবেন নরেন্দ্র মোদি। মোদি ঢাকা সফরে এসে শুধূমাত্র আলোচনা করে বা শুকনো আশ্বাস দিয়ে চলে যাবেন এমনটি ভাবছেন না আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরাও।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন ঢাকা সফরে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী চার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও সফরসঙ্গী হিসেবে আসবেন। এরমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার রয়েছেন। তবে মোদির সফরসঙ্গী হিসেবে সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ঢাকা আসছেন না। তার পরিবর্তে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জয়শঙ্কর আসবেন। এর বাইরে উল্লেখযোগ্য কোন অতিথি মোদির সঙ্গে আসছেন না। এ ছাড়া সফরসঙ্গী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কার্যালয় ও সেদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও থাকছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরে একটি চমক দিয়ে যাবেন। শুধু আশ্বাস দিয়ে যাবেন এমন ব্যক্তি মোদি নন। তিনি চেষ্টা করবেন, ভারতের কংগ্রেস সরকারের চেয়ে বিজেপি সরকার যে বাংলাদেশের ব্যাপারে অনেক বেশি আন্তরিক- তা বুঝিয়ে দিতে। কেননা, মোদির রাজনৈতিক কৌশলটিই ভিন্ন। কারণ, ভারত এই অঞ্চলে বড় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। এ জন্য ভারতকে প্রতিবেশির সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই এই বিষয়টিতে কাজ শুরু করেছেন মোদি।’

ড. ইমতিয়াজ আরো বলেন, ‘বর্তমানে মমতার সঙ্গে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক স্বার্থে বিজেপির সম্পর্ক ভালো। পশ্চিমবঙ্গে বামশক্তিতে রোধ করতে মমতার বিকল্প হয়ে উঠতে পারেনি রাজ্য বিজেপি। অথচ বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হলে পশ্চিমবঙ্গকে বাদ দিয়ে সম্ভব নয়। আর বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে ভারতের পূর্বমূখী কূটনৈতিক সফলতাও সম্ভব নয়। কাজেই মমতাও চান এই সুযোগে পশ্চিমবঙ্গে তার রাজনৈতিক অবস্থান আরো শক্তিশালী করতে। আবার বিজেপিও চান মমতাকে নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে। কাজেই এই সফরে তিস্তা চুক্তি না হলেও এ ব্যাপারে অনেক অগ্রগতি ও সময়সীমা নির্ধারিত হতে পারে।’

জানা গেছে, মোদির ঢাকা সফরকালে দু’দেশের মধ্যে প্রায় দুই ডজন চুক্তি, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- নৌ-পথে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল চুক্তির নবায়ন, নৌ পথে যাত্রী পরিবহণ ও উপকুলীয় জাহাজ চলাচল, জাল টাকা প্রতিরোধে সমঝোতা স্মারক, পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন, চার রাজ্যের সঙ্গে ঢাকার বাস সার্ভিস, সীমান্ত হাট উদ্বোধন, কানেকটিভিটি বিষয়ক সড়ক প্রটোকল চুক্তি, মানব পাচার চুক্তি, বিদ্যুৎ কেনা বিষয়ে সমঝোতা স্মারক, ব্যান্ডউইথ বিক্রি, ২০০ কোটি ডলার ঋণ চুক্তি, ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ অঞ্চল ঘোষণা, পণ্য রপ্তানিতে দুদেশের মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থার মধ্যে চুক্তি, কোস্ট গার্ডকে শক্তিশালী করা, বেসরকারি খাতে আর্থিক সেবা নিশ্চিত করা, সামরিক যন্ত্রপাতি যৌথভাবে উৎপাদন, বৈদেশিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সহজীকরণ চুক্তি, জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ মোকাবেলা এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিনিময়ে সমঝোতা চুক্তি।

তবে এসব বিষয়ে উভয় দেশের কূটনৈতিক পর্যায়ে এখনো আলোচনা চলছে। সীমান্তবর্তী ভারতের চারটি রাজ্যের সঙ্গে বাস সার্ভিস চালু করা বিষয়ক চুক্তিগুলোতে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা ভারতের পক্ষে স্বাক্ষর করবেন। অন্যগুলোতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কোন শীর্ষ কর্মকর্তা না থাকলে সেক্ষেত্রে ভারতের পক্ষে সেদেশের পররাষ্ট্র সচিব জয়শংকর তাতে স্বাক্ষর করবেন।



মন্তব্য চালু নেই