হাটহাজারী বনে লুটপাট চলছে প্রকাশ্যে

চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন হাটহাজারী ফরেস্ট রেঞ্জের বনাঞ্চলে প্রকাশ্যে লুটপাট চলছে।

দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তার যোগসাজশে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রকাশ্যে পাচার হচ্ছে সরকারি বনের কাঠ। হাটহাজারী উপজেলার নাজিরহাট বিট থেকে ভুয়া ট্রানজিট পাসের মাধ্যমে সরকারি বাগানের কাঠ পাচারের সুযোগ দিয়ে হাটহাজারী রেঞ্জ কর্মকর্তা প্রতিদিন ঘুষ আদায় করেন এক থেকে দেড় লাখ টাকা।

অভিযোগ রয়েছে, শুধু হাটহাজারী রেঞ্জ কর্মকর্তার অনিয়ম-দুর্নীতি আর ঘুষবাণিজ্যের কারণে গত দেড় বছরে হাটহাজারী রেঞ্জের পাঁচটি বনবিট এলাকা থেকে ১০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের কাঠ পাচার হয়ে গেছে। ন্যাড়া হয়েছে সরকারি বনভূমি। এ ছাড়া বন বিভাগের বনায়ন কর্মসূচির লাখ লাখ টাকা লুটে নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা।

সরেজমিন অনুসন্ধান ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের অধীন হাটহাজারী ফরেস্ট রেঞ্জটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বন এলাকা। এই রেঞ্জের অধীনে রয়েছে শোভনছড়ি বিট, মন্দাকিনি বিট, সর্তা বিট, নাজিরহাট ডিপো এবং হাটহাজারী বিট কাম স্টেশন। এসব বিট ও স্টেশনের আওতায় রয়েছে সরকারি বিপুল পরিমাণ বনাঞ্চল, ব্যক্তিমালিকানাধীন বনাঞ্চল, বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ডেসটিনি বনাঞ্চল এবং চলমান রয়েছে সরকারি মালিকানাধীন ন্যাড়া পাহাড়ে বনায়ন কর্মসূচি।

প্রায় দুই বছর ধরে এই হাটহাজারী রেঞ্জের দায়িত্বে রয়েছে ইসমাইল হোসেন। সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, বন বিভাগের লোভনীয় পোস্টিং প্লেস হিসেবে খ্যাত এই হাটহাজারী রেঞ্জে মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়েই দায়িত্বপ্রাপ্ত হন রেঞ্জ কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সরকারি বন রক্ষা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার পরিবর্তে রীতিমতো প্রকাশ্যে লুটপাট শুরু করেন এই বন কর্মকর্তা।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শুধু হাটহাজারী রেঞ্জের নাজিরহাট ডিপো থেকে দৈনিক ৫ থেকে ৭টি ভুয়া ট্রানজিট পাস ইস্যু করার মাধ্যমেই রেঞ্জ কর্মকর্তা দৈনিক ঘুষ আদায় করেন এক থেকে দেড় লাখ টাকা। এসব ভুয়া ট্রানজিট পাস নিয়ে মন্দাকিনি ও শোভনছড়ি বিট এলাকা থেকে দৈনিক ৭ থেকে ৮ ট্রাক সরকারি বাগানের কাঠ প্রকাশ্যে পাচার হয়ে যায় নির্বিঘেœ। প্রকাশ্যে এই সরকারি বাগানের কাঠ পাচারের সুযোগ দিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা শুধু এক মাসেই ঘুষ আদায় করেন ৪০ লাখ টাকার বেশি। এই নগদ অঙ্কের ঘুষ ছাড়াও শোভনছড়ি, মন্দাকিনি, হাটহাজারী বিট এবং সর্তা বিটের বিভিন্ন ন্যাড়া পাহাড় বনায়ন কর্মসূচি এবং বাগান পরিচর্যার জন্য বন অধিদপ্তর থেকে বরাদ্দকৃত লাখ লাখ টাকা লুটপাট করেছেন হাটহাজারী রেঞ্জ কর্মকর্তা। প্রতিমাসে এই বন কর্মকর্তার আদায়কৃত ঘুষের অংশ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও প্রদান করেন বলে সূত্রে জানা গেছে।

হাটহাজারী নাজিরহাট এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কাঠ ব্যবসায়ী জানান, আমরা প্রতিদিন রেঞ্জ কর্মকর্তাকে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে কাঠ পরিবহনে ট্রানজিট পাস সংগ্রহ করি। এতে বন বিভাগ থেকে কোন বাধা থাকে না।

সরেজমিন অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, হাটহাজারী রেঞ্জ কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেনের প্রতিমাসের বাসা ভাড়া এবং দৈনিক বাজারের যাবতীয় খরচ প্রদান করা হয় হাটহাজারী বিট কাম চেক স্টেশন থেকে।

এসব বিষয়ে হাটহাজারী রেঞ্জ কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেনে কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘুষ বাণিজ্য ও সরকারি বাগানের গাছ লুটপাট হওয়ার সত্যতা অকপটে স্বীকার করে বলেন, বন বিভাগে এসব লুকোচুরির কিছু নেই।

ইসমাইল হোসেন বলেন, আমি মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়েই এই রেঞ্জের দায়িত্ব নিয়েছি। প্রতিমাসে এই রেঞ্জ থেকে যে আয় হয় তার থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ভাগ পান। ফলে এসব বিষয়ে লিখালিখি করে কিছুই হবে না। তার মাসের বাজার খরচ ও ঘরভাড়া অধস্তন চেক স্টেশন থেকে নেওয়ার কথাও স্বীকার করেন তিনি।

এ ব্যাপারে বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. ইউনুছ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের হাটহাজারী রেঞ্জে রমরমা ঘুষবাণিজ্যের বিষয়টি শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন।

প্রধান বনসংরক্ষক ইউনুছ আলী বলেন, আমি বিষয়টি আজ জানলাম। দ্রুত সময়ে তদন্তপূর্বক এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট বনসংরক্ষক ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হবে বলে প্রধান বনসংরক্ষক নিশ্চিত করেন।রাইজিংবিডি



মন্তব্য চালু নেই