হারিয়ে যাওয়া বন্ধুর দেখা মিলল ১৯ বছর পর!

শুক্রবার বেলা আড়াইটার ঘটনা। সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল অ্যান্ড কলেজমাঠ। কিআনন্দ উৎসব চলছে। ভিড়ের মধ্যে হঠাৎ দেখা গেল, দুজন মাঝবয়সী নারী একে-অপরকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছেন। কাছে যেতেই জানা গেল, তাঁরা হারিয়ে যাওয়া দুই বন্ধু।

কিশোর আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উৎসবে এসে শুক্রবার ১৯ বছর পর দেখা হলো তাঁদের। সিনেমায় প্রায়ই দেখা যায়, মেলায় হারিয়ে যাওয়া দুই বন্ধুর দেখা হয় বড় হলে পর। আর এখানে পুরোপুরি উল্টো! মেলায় এসেই দেখা হয়ে গেল রুমা হালদার ও রিতা জেসমিনের! তাই তো দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন স্থান-কাল-পাত্র ভুলে!

রুমা হালদার ও রিতা জেসমিন একসঙ্গে গার্ল গাইডস করতেন। সে বছর বিশেক আগের কথা। তখন রুমা পড়তেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে আর রিতা পড়তেন উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষে। বয়সের ফারাক থাকলেও গার্ল গাইডসের সদস্য হওয়ায় একসঙ্গে অনেক ঘুরে বেড়িয়েছেন তাঁরা। প্রথম সার্ক অ্যাডভেঞ্চার প্রোগ্রামে অংশ নিতে দুই বন্ধু একসঙ্গে গিয়েছিলেন ভারতে। প্রথম উড়োজাহাজে চড়ার অভিজ্ঞতা, প্রথম বিদেশভ্রমণ, প্রথম বাড়ি থেকে ১৯ দিনের জন্য অনেক দূরে যাওয়ার অভিজ্ঞতাগুলো দুই বন্ধুর জীবনে একসঙ্গেই আসে। কিন্তু ১৯৯৭ সালে সেই সফর শেষে যখন আর দেখা হয় না তাঁদের, তখন থেকেই মনে বিষণ্নতার ছাপ পড়তে শুরু করে রুমা ও রিতার।

শুক্রবার কি আনন্দ উৎসবে স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে রাজধানীর বেইলি রোড থেকে বেড়াতে গিয়েছিলেন রিতা জেসমিন। আর ধানমন্ডির রুমা হালদারের মেয়ে অংশ নেয় কিআনন্দ উৎসবের ‘শখ কত’ বিভাগে। মেলায় ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ দুজনের দেখা হয়ে গেলে রিতা জেসমিন বন্ধুকে জড়িয়ে কেঁদে ওঠেন। রুমাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। চোখে পানি নিয়েই রুমাকে বলছিলেন রিতা, ‘কত খুঁজেছি তোমাকে। কোথাও পাইনি।’ রুমাও বিস্ময়ভরা চোখে বন্ধুর ক্লাস সেভেনে পড়া মেয়েকে আদর করে কাছে নিয়ে বলছিলেন, ‘কত বড় হয়ে গেছে তোমার মেয়ে! সেই ১৯৯৭ সালের পর আর দেখা হয়নি আমাদের, তাই না?’

দুই বন্ধু এরপর রাজ্যের আলাপ জুড়ে দিলেন। দলের কে কোথায় আছেন? কেমন আছেন? সব গল্প যেন আজই বলে শেষ করে ফেলবেন তাঁরা। তাঁদের কথার মাঝে অনুপ্রবেশ করে যখন জানতে চাইলাম, সন্তানদের জন্য আজ হারানো বন্ধুকে ফিরে পেলেন, কেমন লাগছে? তখন আবারও রিতার চোখে জল। বললেন, ‘এই অনুভূতি প্রকাশ করা খুব কঠিন। আজ ছেলেমেয়েরা আমাদের দুই বন্ধুকে আবারও মিলিয়ে দিল।’ আর রুমা বললেন, ‘কিশোর আলোকে ধন্যবাদ, এই আয়োজনটির জন্য। এখানে না এলে প্রিয় বন্ধুটাকে হয়তো খুঁজেই পেতাম না কোনো দিন।’ এই বলেই দুই বন্ধু রুমা ও রিতা আবারও স্মৃতিচারণা ও আড্ডায় ডুব দিলেন। ১৯ বছর পর হারানো বন্ধুকে পেয়ে ভুলেই গেলেন যে তাঁদের সঙ্গে এখন স্বামী ও সন্তানেরাও আছেন, তাঁরা আর কিশোরী নন, তাঁরা এখন মাঝবয়সী। কিশোর আলোর উৎসবে এসে আবারও কৈশোরে ফিরে গেলেন মাঝবয়সের কোটায় থাকা রুমা ও রিতা। আড্ডা, হাসি আর অতীত স্মৃতিতে বুঁদ হয়ে গেলেন হারিয়ে পাওয়া দুই বন্ধু। আমরা আর তাঁদের বিরক্ত করলাম না! ১৯ বছর তো কম নয়!-প্রথম আলো



মন্তব্য চালু নেই