হাসতে হাসতে স্ত্রীকে হত্যা!

হাসতে হাসতে খেলার ছলে স্ত্রীর হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন স্বামী। এরপর ভোরের আলো ফোটার আগেই শিশুসন্তানকে নিয়ে পালিয়ে যান তিনি। রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকায় ২৮ জুন সংঘটিত ‘ক্লুলেস’ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন শেষে এমনই তথ্য জানিয়েছে পুলিশ। নিহত ওই গৃহবধূর নাম নাসিমা বেগম (২৫)। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন তার স্বামী জুয়েল বিশ্বাস (৩০)।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মুনতাসিরুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, গত ৩০ জুন কামরাঙ্গীরচর থানার পশ্চিম রসুলপুর কামাল সুপার মাকের্টের পেছনের আনোয়ার মিয়ার বাড়ির একটি কক্ষ থেকে তালা ভেঙে অজ্ঞাত এক নারীর লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। ঘটনার একমাস পর পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘটন করতে সক্ষম হয়েছে। নিহত নাসিমা বেগমকে তার স্বামী জুয়েল বিশ্বাস শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন। স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।

তিনি জানান, নাসিমা ২০০৮ সালের দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন। জুয়েল বিশ্বাস পেশায় একজন রংমিস্ত্রী। তিনিও মোহাম্মদপুর এলাকার একটি মেসে ভাড়া থাকতেন। জুয়েল নিজের নাম পরিবর্তন করে ইমন ছদ্মনামে নাসিমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়েন। এরপর ২০০৯ সালে জুয়েল তার ভুয়া নাম ঠিকানা দিয়েই নাসিমাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকেই নাসিমা তার বাবার বাড়ি যশোরে ছিলেন। জুয়েল ঢাকাতেই থাকতেন। মাঝেমাঝে তিনি যশোরে যেতেন। এরমধ্যে ২০১০ সালে তাদের এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। তার নাম দিপু (৫)।

তিনি আরও জানান, জুয়েল নিজের বাড়ি বরিশাল বলে সবাইকে বলতেন। তার প্রকৃত বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায়। ২০১২ সালে সেখানে আরও একটি বিয়ে করে জুয়েল। সেই স্ত্রীর নাম সুমি (২০)। দ্বিতীয় বিয়ে করার পর থেকেই তিনি বড় বউ নাসিমাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন। এজন্য নাসিমাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। তারা প্রথমে যাত্রাবাড়ীতে ছিলেন কয়েক মাস। সেখানে নাসিমাকে হত্যার পরিকল্পনা করে ব্যর্থ হন। এরপর গত ২৮ জুন কামরাঙ্গীরচরের নিরিবিলি ওই বাসাটি ভাড়া নেন জুয়েল। বাড়ি ভাড়া নেওয়ার সময় জুয়েল বাড়িওয়ালাকে কোনো মোবাইল নম্বর ও ঠিকানা দেননি।

জুয়েলের বরাত দিয়ে উপপুলিশ কমিশনার জানান, ২৮ জুন রাতের খাবার খেয়ে সন্তান দিপুকে ঘুম পাড়ান মা নাসিমা। ছেলে ঘুমানোর পর স্বামী-স্ত্রী স্বাভাবিক কথা বলেন। জুয়েল হাসতে হাসতে তার স্ত্রীর হাত-পা বেঁধে ফেলেন। এরপর স্ত্রীকে কাপড় দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার করার পর জুয়েল সারা রাত ঘুমাতে পারেননি। ভোরের আলো ফোটার আগেই ছেলেকে ঘুম থেকে ডেকে তুলেন। জুয়েল ছেলের মুখ ধুয়ে দ্রুত বাসা থেকে বের হয়ে যান। এসময় দিপু তার মাকে নিতে চাইলে জুয়েল তাকে বলেন, ‘তোমার আম্মু ঘুমায়। বাসার দরজা বাহির থেকে তালা দিয়ে চলে যান জুয়েল। ছেলেকে নিয়ে তিনি গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় পালিয়ে যান। সেখানে দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে ছেলেকে রেখে আবারও মোহাম্মদপুরের মেসে উঠেন জুয়েল।

মুনতাসিরুল ইসলাম জানান, বিয়ের পর থেকে নাসিমা যশোরে তার বাবার বাড়িতে বেশিরভাগ সময় থাকতে। বিয়ের তিন বছর পর ২০১২ সালে জুয়ের দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী সুমি (২০) জুয়েলের গ্রামের বাড়িতেই থাকেন। তার দুই স্ত্রীর সঙ্গে বিরোধ ছিল। তাদের বনিবনা হতো না। এনিয়েও জুয়েলের ক্ষোভ ছিল। নাসিমার সামাজিক পরিচয় ভালো না থাকায়ও তাকে নিয়ে অসন্তোষ ছিল জুয়েলের। এসব কারণ থেকে নাসিমাকে হত্যা করা হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত ৩০ জুন বিকালে পশ্চিম রসুলপুর কামাল সুপার মার্কেটের পেছেনে আনোয়ার মিয়ার বাড়ির একটি কক্ষ থেকে তালা ভেঙে নাসিমার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের বাবার নাম আসলাম শেখ। যশোরের কোতয়ালী তাদের গ্রামের বাড়ি।



মন্তব্য চালু নেই