হিমালয়ের জঙ্গলে একাই আছেন ৮৩ বছরের বৃদ্ধা

ব্যস্ততার মধ্যেই আমরা একটু স্বস্তি খুঁজি। তাই মাঝে মাঝে বেড়িয়ে পড়ি এদিক-সেদিক। ট্রাভেল ব্যাগ কাঁধে নিয়ে পাহাড়ে বা সমুদ্রের মাঝে নিজেকে এলিয়ে দিই অজান্তে। শহুরে আদব-কায়দার নজর এড়িয়ে পাহাড়ের নিস্তব্ধতা, সৌন্দর্যর মোহে কখনও কখনও মনে হয় যেন বছরের পর বছর এই প্রকৃতির কোলেই শুয়ে থাকি। ৮৩ বছরের ছেত্রী দেবী হিমালয়ের কোলে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন। পাহাড়ের মুগ্ধ করা বন্য-সৌন্দর্যর মাঝে থাকার কথা আমরা শুধু ভাবি, তারপর পকেটে টান পড়ার ভয়ে ফের কাজের জগতে ফিরে আসি। কিন্তু ছেত্রী দেবী প্রকৃতিকে ভালোবেসে বসবাস করেছেন। একাই। গ্রেট হিমালয়ান ন্যাশানাল পার্কের একমাত্র মানুষ হলেন এই ছেত্রী দেবী।

একচিলতে কাঠের ঘরে না আছে বিদ্যুৎ, না আছে মোবাইল ফোন, না আছে ঘড়ি! কোনো কিছুরই তার দরকার পড়েনি। সভ্যজগতের সঙ্গে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন ও একাকী থেকে ওই নির্জন ও গভীর জঙ্গলে হিংস্র পশুদের সঙ্গেই জীবনটা সুন্দর করে কাটাচ্ছেন। ভয়-ডর বলে তার কিছু নেই। দিনে হোক বা রাতে, তার বাড়ির সামনে দিয়েই বাচ্চা-সহ কালো ভাল্লুক, লেপার্ড, বিষাক্ত সাপ চলাচল করে। তিনি কখনও তাদের শিকার করেননি। কখনও তাদের যাতায়াতের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াননি। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এই ন্যাশানাল পার্কটি ইউনেস্কো স্বীকৃত। ৭৫৪ স্কয়ার কিলোমিটার বিস্তৃত এই পার্কটিতে লেপার্ড, হিমালয়ের কালো ও বাদামি রংয়ের ভাল্লুক, স্নো লেপার্ড-সহ প্রায় ৩১টি স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে।

এ ছাড়া ৩০০ প্রজাতির পাখি, সাপ, ১ শ’র বেশি প্রজাতির কীটপতঙ্গ রয়েছে এই জাতীয় উদ্যানে। পরিবারের বাকি সদস্যরা জাতীয় উদ্যানের বাইরে থাকলেও, নিজে থাকেন এই নির্জন ও ভয়ংকর জঙ্গলে। স্বামী মারা গিয়েছে কয়েক দশক হয়ে গিয়েছে। স্বামীর হাতে তৈরি বাড়ি ও খামারবাড়ি ছেড়ে তিনি যেতে চাননি। নিজেদের তৈরি করা সুন্দর বাগানে পেট চলাবার মতো গম, বার্লি, আলু, ভুট্টা ও রাজমা চাষ করেন তিনি। পরিবারের সঙ্গে না থেকে, বন্য প্রাণীদের সংস্পর্শে থেকে ও পাহাড়ি প্রকৃতির মাঝে দিব্যি রয়েছেন তিনি।



মন্তব্য চালু নেই