হ্যাপী : আমাদের ক্রিকেটের নায়িকা…

ক্রিকেটারদের সঙ্গে নায়িকাদের প্রেমের ঘটনা ইতিহাসে বারবার ঘটেছে। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে হ্যাপীই প্রথম নায়িকা হিসেবে আবির্ভূত হলেন পেসার রুবেলের সঙ্গী হয়ে। যদিও তাদের মধ্যে বৈরীতার শেষ নেই। কিন্তু ক’দিনের ব্যবধানেই হ্যাপী নামটি জড়িয়ে গেছে আমাদের ক্রিকেটের সঙ্গে। বাংলাদেশ টিমের জয় মানে হ্যাপী, পরাজয় মানে হ্যাপী, খেলার প্রতিমুহুর্তেই হ্যাপী আছেন আমাদের উত্তেজনার সঙ্গী হয়ে। চলুন জেনে নেয় কি করে চিত্রনায়িকা হ্যাপী আমাদের ক্রিকেটের নায়িকা হয়ে উঠলেন…

পৃথিবী তার সহজাত নিয়মে চলছিলো; দিনের পর রাত, ফের রাতের পর দিন। কিন্তু হঠাৎ এক ভোরে শোনা গেলো একটি ‘ধর্ষণ’ মামলার কথা। ধর্ষণপ্রবন এই রাষ্ট্রে এইরকম মামলা একটা মামুলি ব্যাপার হলেও এই মামলাটা বিশেষ গুরত্ব পেলো! রাষ্ট্রের সকল মানুষের মনযোগ নিয়ে নিলো। কারণ এই মামলার সাথে যে যেনো তেনো কেউ জড়িত নয়, ধর্ষক হিসেবে যার নাম রয়েছে তিনি দেশের জনপ্রিয় ক্রিকেটারদের একজন, নাম তার রুবেল হোসেন!

বিশ্বকাপ ক্রিকেট শুরুর আগ মুহূর্তে বাংলাদেশ দলে জায়গা পাওয়া রুবেল হোসেনের নামে ধর্ষণ মামলাটি ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’তে পরিনত হয়। শুধু কি দেশব্যাপী, আন্তর্জাতিক মহলেও এই ঘটনাটি আলোড়ন তুলে। ধর্ষণ মামলা যিনি করলেন, তিনি বেশীর ভাগ মানুষের কাছে অপরিচিত এক মুখ। নাম তার নাজনীন আক্তার হ্যাপী। তিনি উঠতি মডেল ও অভিনেত্রী।

2LWTEC5

ধর্ষণ মামলার পর মানুষ শুনতে পেলো ক্রিকেটার রুবেল আর মডেল হ্যাপীর রোমান্সের কথা, প্রেম বিরহ আর সম্পর্কের কথা। মিডিয়া দৌড়ালো, মনোনিবেশ করলো খুব করে। প্রথমবার সমগ্র দেশ শুনলো রুবেলের সাথে জড়িয়ে আছে একজন ‘হ্যাপী’র নাম। প্রেম আর প্রনয়ের কেচ্ছা শুনতে মানুষের আগ্রহ হলো খুব। মানুষের এমন আগ্রহ দেখে মিডিয়াও নড়েচড়ে বসলো; টিভির টিআরপি,অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোতে হিট আর পত্রিকাগুলোর সার্কুলেশন হুরহুরিয়ে বাড়তে থাকলো। সাধারণ মানুষের এমনতর আগ্রহ দেখে মিডিয়াও হ্যাপীর সাথে লেগে থাকলো। হ্যাপীর মুখপাত্র হয়ে উঠলো তার ফেসবুক ওয়াল! যখনই স্ট্যাটাস, তখনই সংবাদ!

রাতারাতি অখ্যাত ‘হ্যাপী’ নামটি বাংলাদেশে একটি অতি পরিচিত নাম হয়ে উঠলো। সংবাদমাধ্যম ছাড়াও হ্যাপী জায়গা করে নিলো বাংলাদেশের সমস্ত মাইক্রোব্লগিং সাইটে; ফেসবুক আর টুইটারে চললো হ্যাপীর ব্যবচ্ছেদ, কিংবা কোনো ফেমেনিস্ট থেকে সাহসিকতাপূর্ণ আচরণের জন্য কুড়ালো ব্যাপক প্রশংসা। প্রেমিক রুবেলের নামে ধর্ষণ মামলা ঠুকে দেয়ায় দেশজুড়ে চললো তর্ক-বিতর্ক! কেউ হাইকোর্ট দেখিয়ে বললেন, প্রেমিকের নামে ধর্ষণ মামলা হতে পারে না, বড়জোর প্রতারণা মামলা হতে পারে। বরং হ্যাপী নিজেই প্রতারক, কারণ এসব করে তিনি খবরে আসতে চাইছেন, শিরোনাম হতে চাইছেন!

কিন্তু ব্যাপারটা কি শুধু ‘শিরোনাম’-এ খবর হওয়ার জন্যই, নাম-ডাক ছড়ানোর জন্যই? হ্যাপীর কথা বার্তায় হৃদয়ের ব্যাকুলতা কি কেউ খুঁজে পেলো না? তার বেশীর ভাগ স্ট্যাটাসে ধরা পড়ে একজন প্রেমিকের প্রতি সরল এক প্রেমিকার আকুতি, আর্তি! এমনটাও নিশ্চয় কেউ না কেউ ভেবেছেন…! হ্যাঁ, কখনো সখনো হ্যাপী বেফাঁস মন্তব্য করে বসেন সত্য, কিন্তু অধিকাংশ সময়েই তার মন্তব্যে ধরা পড়ে প্রেমিকের প্রতি রাগ-অনুরাগ আর অভিমান মিশ্রিত কথামালা।

ক্রিকেট দুনিয়ার তারকাদের সাথে বিনোদন জগতের এমনতর সম্পর্কের ঘটনা হরহামেশায় হচ্ছে, এবং হয়েছে। ভিভ রিচার্ড, ইমরান খান, রবী শাস্ত্রি, সৌরভ গাঙ্গুলি থেকে শুরু করে একেবারে বিরাট কোহলি পর্যন্ত তারকা ক্রিকেটারদের সাথে বিনোদন জগতের সুন্দরীদের সম্পর্কের কথা মিডিয়ায় ব্যাপক ঝড় তুলেছে। ভিভ রিচার্ডসনের মতো মহা তারকা ক্রিকেটারের সম্পর্ক ছিলো বলিউড অভিনেত্রী নীনা গুপ্তার সাথে। সেই সময় এই প্রেমের খবর বিশ্বে ব্যাপক তোলপাড় তৈরি করেছিলো। যদিও ভিভ সব সময়-ই নীনার সাথে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে এসেছেন। পরস্পরের মধ্যে বিয়ে না হলেও গুঞ্জন ছিলো নীনার গর্ভে ছিলো ভিভের সন্তান, এবং সেই সন্তানকে দেখতে প্রায়শই নাকি ভারতে আসেন ভিভ রিচার্ডসন! ভারতের তারকা ক্রিকেটার রবী শাস্ত্রী এবং অমৃতা সিংয়ের সম্পর্কের কথাও সে সময় মিডিয়ায় খুব সর-গরম ফেলেছিলো! যদিও তাদের মধ্যকার সম্পর্কটি শেষ পর্যন্ত টিকেনি।

odJJKR2

ক্রিকেট বিশ্বে আরেকটি সম্পর্ক খুব আলোচিত হয়েছিলো, পাকিস্তান ক্রিকেট তারকা ইমরান খান এবং বলিউডের সেরা আবেদনময়ী অভিনেত্রী জিনাত আমানের প্রেম! যদিও তাদের সম্পর্কও শেষ পর্যন্ত টেকেনি। ক্রিকেটার ও বিনোদন জগতের নায়িকা,অভিনেত্রী কিংবা মডেলদের সাথে সম্পর্কগুলোর বেশীর ভাগ সম্পর্কই আর টেকেনি, হাতে গুনা দুয়েকটা ব্যতিক্রম ছাড়া। তাহলে হ্যাপী-রুবেলের মধ্যকার সম্পর্ক, প্রেম এগুলিকে মানুষ এতো হেয় দৃষ্টি দিয়ে দেখা হয়, তাচ্ছিল্যই বা কেনো করি আমরা? এগুলোতো সাধারণ ব্যাপার; এরকম ঘটনা পৃথিবী অজস্র হয়েছে, এবং হচ্ছে।

তবে এটি ঠিক যে, ক্রিকেটারদের সাথে বিনোদন জগতের মানুষের সম্পর্ক হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক, কিন্তু তাদের মধ্যকার সম্পর্ক টিকে থাকাটা প্রায় অস্বাভাবিক (মনসুর আলী খান পতৌদি এবং শর্মিলা ঠাকুর দম্পতির কথা মাথায় রেখেই বলছি)!

রুবেলের সাথে হয়তো এখন আর হ্যাপীর সম্পর্ক নেই, কিন্তু তবুও তিনি আছেন ক্রিকেটের মধ্যে। বাংলাদেশের খেলা হলেই তিনি মাঠে চলে যাচ্ছেন, একেবারে কাছ থেকে দাঁড়িয়ে অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন দলকে। মাঝে মধ্যেই চমকপ্রদ কথা বলে ভক্ত-অনুরাগীদেরও আগ্রহটা জিইয়ে রাখছেন। রুবেল ছেড়ে গেলেও ক্রিকেট তাকে ছেড়ে যায়নি। কি করে যাবে, এই ক্রিকেটই তো তাকে পরিচিতি এনে দিয়েছে। তিনি যে ভিনদেশি জিনাত আমান, নাগমা, রীনা রায়, সোনালি বিন্দ্রে, সংগীতা এবং আনুশকা শর্মার মতো আমাদের ক্রিকেটের নায়িকা!প্রিয়.কম



মন্তব্য চালু নেই