১০ টাকা কেজি দরের চাল এবার মৃত ব্যক্তির নামে

হতদরিদ্রদের জন্য বিশেষ খাদ্য সহায়তার অধীনে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণে আরেক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে শরীয়তপুরে। সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নে মৃত ব্যক্তির নামে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণ দেখিয়েছেন পরিবেশক। যার নামে চাল তোলা হয়েছে, তার স্ক্রী বেঁচে আছেন। তিনি জানেনও তা তার মৃত স্বামীর নামে এই চাল বরাদ্দের কথা।

কেবল এই একজন নয়, তালিকাভুক্ত একাধিক মানুষ জানিয়েছেন, তারা চাল তুলছেন না। এই চাল কী হচ্ছে, সে বিষয়েও কিছু বলতে পারছেন না তারা।

আংগারিয়া ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় এক হাজার ৩৪৪ জন হতদরিদ্রকে প্রতি মাসে ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি চাল দেয়ার জন্য তালিকা করা হয়।

ওই ইউনিয়নে চালের পরিবেশক ও ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারের যোগসাজসে সচ্ছল, প্রবাসী, সরকারি চাকরিজীবীর নাম তালিকাভূক্ত করে চাল লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। এতে বঞ্চিত হয়েছে প্রকৃত হতদরিদ্ররা। এতে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

তালিকায় ৯ নং ওয়ার্ডে এক হাজার ৩১১ নম্বরে নাম আছে শাহাজালাল এর। অথচ তিনি চার থেকে পাঁচ বছর আগেই মারা গেছেন। তার স্ত্রী তার স্ত্রী রহিমা বেগম একটি খুপড়ি ঘড়ে বসবাস করেন। কিন্তু তিনি কোন চাল পান না।

গত দুই মাস ধরেই শাহাজালালের নামে টিপ সই দেখিয়ে ও চাল বিতরণ দেখানো হয়েছে। তার স্ত্রী হতদরিদ্র রহিমা বেগম জানেন না, তার মৃত স্বামীর নামে চাল উত্তোলন করা হয়েছে।

তালিকায় থাকা এক হাজার ২১৬ নম্বরে নাম থাকা শাহিনুর বেগমের স্বামী কুয়েত প্রবাসী। যথেষ্ট স্বচ্ছল তিনি। শাহিদুর বেগম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি একবার চাল এনেছিলাম। এরপর আর যাইনি। আমাদের নামে কে চাল তুলেছে তা জানি না।’

তালিকায় এক হাজার ২৫৮ এ নাম থাকা সাজেদা বেগমের স্বামী আতাউর রহমান সরকারি চাকরি করেন। তিনি বলেন, ‘তালিকায় আমাদের নাম আছে কিন্তু আমরা চাল তুলিনি।’

এক হাজার ২৭১ নম্বরে নাম থাকা নাজমা আক্তার স্থানীয় ৯৯নং খায়েরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। কিন্তু তিনি হতদরিদ্রদের তালিকাভুক্ত হয়ে চাল তুলেছেন।

এক হাজার ২৬৫ রফিকুল ইসলাম খান, এক হাজার ২৬২ নম্বরের আবদুল জাব্বার খান, এক হাজার ২৬৪ নম্বরের বিল্লাাল হোসেন খান একই পরিবারের হলেও ডিলার ও মেম্বারের আত্মীয়তার কারণে তালিকাভূক্ত হয়েছেন।

এভাবে তালিকাভুক্তদের একটি বড় অংশই স্বচ্ছল। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেও সঙ্গে আত্মীতার সুযোগে তারা তালিকায় নাম তুলেছেন বলে অভিযোগ আছে।

গত ৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী এই খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি উদ্বোধনের পর থেকেই এ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হুঁশিয়ারি, বেশ কয়েকজন পরিবেশকের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তারেও কাজ হয়নি। অনিয়ম চলছে আগের মতোই।

তবে শরীয়তপুরের পরিবেশক মফিজুর রহমান খানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এখনও। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।

হতদরিদ্রদের তালিকাভূক্ত করার কথা থাকলেও স্থানীয় ৯নং ওয়ার্ড মেম্বার আকিবার খান ও অন্যান্য মেম্বারদের তালিকায় থাকা হতদরিদ্ররা বাদ পড়েছে।

জাব্বার তালুকদার, দেলোয়ার তালুকদার, আবুল কাশেম, সলেমন শিকদার ও ফরহাদ খান স্থানীয়ভাবে হতদরিদ্র হিসেবেই পরিচিত। তারা সবাই চাল না পেয়ে হতাশ। বলেছেন, যারা তাদেরকে বাদ দিয়ে সম্পদশালীদেরকে চাল দিয়েছে তাদের বিচার করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে, আংগারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব জুয়েল পারভেজ বলেন, ‘তালিকা প্রণয়ন কমিটিতে আমি ছিলাম না। তাই এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে পারবো না।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, ‘অনিয়মের অভিযোগ আমিও জেনেছি। এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে কাজ কাজ চলছে।’

তবে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই পরিবেশক মফিজুর রহমান খানের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি কথা বলতে চাননি।



মন্তব্য চালু নেই