১০ বছর পর ‘সংস্কারপন্থী’ দুই নেতাকে ডাকলেন খালেদা জিয়া

২০০৭ সালের এক এগারোর সময় সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিতি পেয়ে দলের বাইরে থাকা নেতাদের আবার দলে টানছে বিএনপি। দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর পর দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বৃহস্পতিবার দুই ‘সংস্কারপন্থী’ নেতাকে ডেকে কথা বলেছেন। তাঁদের দলের জন্য কাজ করতেও বলেছেন।খবর প্রথম আলো’র।

বিএনপির সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন বিএনপির সাবেক তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সাবেক সাংসদ জহির উদ্দিন স্বপন এবং সাবেক সাংসদ সর্দার সাখাওয়াত হোসেন বকুল। খালেদা জিয়া তাঁদের দুজনের সঙ্গে প্রায় আধা ঘণ্টা কথা বলেন। খালেদা জিয়া তাঁদের আবার দলের কাজে সক্রিয় হতে বলেছেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে বলেছেন। পর্যায়ক্রমে এ রকম আরও বেশ কয়েকজন নেতাকে খালেদা জিয়া ডেকে পাঠাবেন।

বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, জহির উদ্দিন স্বপন ও সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল গতকাল রাতে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন।

জানতে চাইলে জহির উদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাঁদের দুজনকে প্রায় আধা ঘণ্টা সময় দিয়েছেন। দলের জন্য কাজ করতে নতুন করে সুযোগ দেওয়ায় তিনি দলের চেয়ারপারসন, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

আর সাখাওয়াত হোসেন বলেন, চেয়ারপারসন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে কথা বলেছেন। ‘মাতৃস্নেহে’ ভবিষ্যতের করণীয় তুলে ধরেছেন, দলের জন্য কাজ করতে বলেছেন। তাঁরা অতীতের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, তাঁরা অন্য কোনো দলে যাননি কারণ তারা বিএনপিতে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন।

২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে ভাঙন ধরেছিল। দলের একাংশ সংস্কার প্রস্তাব তুলে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগ থেকে এবং খালেদা জিয়াকে বিএনপি থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। দুই নেত্রী সে সময় কারাবন্দী ছিলেন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর দুই নেত্রীই সংস্কারপন্থী নেতাদের অনেককেই আর দলে জায়গা দেননি।

২০০৭ সালের জুনে বিএনপির মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া একটি সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে দলের যেসব নেতা সক্রিয় ছিলেন তাঁরা পরিচিতি পেয়েছিলেন সংস্কারপন্থী হিসেবে। সে সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মান্নান ভূঁইয়াসহ কয়েকজনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছিলেন। পরবর্তীতে সংস্কারপন্থীরা দলের অপর অংশের আক্রমণের মুখেও পড়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত সংস্কার প্রস্তাব সফল হয়নি। এর সঙ্গে যুক্ত অনেককে বহিষ্কার করা না হলেও দলে আর জায়গা পাননি। তবে সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত বেশ কয়েকজন নেতাকে এর আগেই দলে টেনেছে বিএনপি। তারপরও এখনো অনেক নেতা সক্রিয় হতে চাইলেও দলে জায়গা পাচ্ছেন না।

বিএনপির সূত্র জানায়, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন চান দলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে। সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত যেসব নেতা দলে জায়গা না পেয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন তাঁদের সক্রিয় করতে। এর অংশ হিসেবে গতকাল ওই নেতাকে খালেদা জিয়া ডেকে পাঠান। পর্যায়ক্রমে এ রকম আরও কয়েকজনকে তিনি ডেকে পাঠাবেন।

এক এগারোর সময় জহির উদ্দিন বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ছিলেন। ২০০৯ সালে কাউন্সিলে তিনি আর দলে জায়গা পাননি। তখন থেকে তিনি দলের বাইরে আছেন। ২০০৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। সেসময় খালেদা জিয়া তাঁকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বলেছিলেন।



মন্তব্য চালু নেই