১১ দিনেও খোঁজ মেলেনি তনুর ছোট ভাইয়ের বন্ধুর

সোহাগী জাহান তনুর ছোট ভাইয়ের বন্ধু মিজানুর রহমানের (সোহাগ) এখনো খোঁজ মেলেনি। ১১ দিন আগে গভীর রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে একদল লোক মিজানুরকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যান।

পরিবারের সদস্যদের ধারণা, তনু হত্যার পর তাঁর ছোট ভাই আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলার কারণেই মিজানুরকে সরকারি কোনো বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছেন। এ জন্য তাঁরা পুলিশ, র্যা ব ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে ধরনা দিয়েছেন, কিন্তু ছেলের খোঁজ পাননি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোনো বাহিনী মিজানুরকে ধরে নেওয়ার কথা স্বীকার করেনি, আবার তাঁকে উদ্ধারও করতে পারেনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার নারায়ণসার গ্রামে মিজানুরের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, ছেলের চিন্তায় কৃষক বাবা নুরুল ইসলাম শয্যাশায়ী। তাঁকে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। তাঁর পাশে বসে কাঁদছেন মা সাহিদা আক্তার। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের অনেকেই ওই বাড়িতে ভিড় করেছেন। কেউ মিজানুরের মা-বাবাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন, আবার কেউ আফসোস করছেন।

মিজানুর রহমান সোহাগশয্যাশায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘২৭ মার্চ রাত একটায় ওরা বাড়িতে ঢুকে। বলে, “আমরা আপনাদের ঘরটা চেক করব। আমরা আইনের লোক, কোনো অসুবিধা হবে না।” আধা ঘণ্টা অবস্থান করার পর আমার ছেলেকে তুলে নেয়। তারা একটি মোটরসাইকেল, একটি জিপ ও একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস নিয়ে আসে। পরদিন সকাল ১০টায় ওকে দিয়ে যাবে বলে জানায়। এরপর প্রতিদিনই সকাল ১০টা হয়, কিন্তু ছেলে তো ফিরে আসে না।’

নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বহু কষ্টে ছেলেকে এইচএসসি পাস করিয়েছি। বিবিএ পড়ার ইচ্ছে ছিল ছেলেটার, এখন সবই শেষ। আমার ছেলে কোনো অন্যায় করে থাকলে বিচার হবে। কিন্তু আইনের লোক এত দিন নিয়ে গায়েব করে রাখবে কেন?’

মিজানুরের বড় বোন খালেদা আক্তার বলেন, ‘তনুর ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন (রুবেল) আর মিজানুর কালাকচুয়া কাজিম উদ্দিন খন্দকার উচ্চবিদ্যালয়ে একসঙ্গে পড়ত। আনোয়ার নাজিরাবাজার এলে তারা একসঙ্গে গিয়ে আড্ডা দিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘২৭ মার্চ বিকেলে আমি ও আমার ভাই টিভি দেখছিলাম। ওই সময়ে টিভিতে তনুর ভাই সাক্ষাৎকার দিচ্ছিল। সোহাগ (মিজানুর) আমাকে বলল, “আপা দেখো, আমার বন্ধু বক্তব্য দিচ্ছে।” তখন আমি বললাম, কীভাবে তনু মারা গেল, একটা ফোন দিয়ে দেখ। তখনই সোহাগ তিনবার ফোন করেছিল তনুর ভাইয়ের নম্বরে। কিন্তু তনুর ভাই ফোন ধরেনি। এ ছাড়া তনু হত্যার পর কুমিল্লা সেনানিবাস-সংলগ্ন নাজিরাবাজার এলাকায় যে মানববন্ধন হয়, তাতে মিজানুর অংশ নিয়েছিল।’

খালেদা আক্তার বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত, তনুর ভাইকে ওই দিন ফোন করা আর মানববন্ধনে অংশ নেওয়ায় কারণেই আমার ভাইকে ধরে নিয়ে গেছে। ধরে নেওয়ার সময় আমি উনাদের বলি, “আপনারা যে আইনের লোক কার্ড দেখান।” তাঁরা বলেন, “তোকেও ধরে নেব”।’

এ সময় মেয়ের কথার সায় দিয়ে মা সাহিদা আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই, কোনো ঝামেলায় ছিল না। এরপরও তাকে কেন তুলে নিল?’ তিনি বলেন, ‘থানায় জিডি করেছি, কোনো ফল পাইনি।’

বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, বুড়িচং থানায় গত ৩০ মার্চ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। মিজানুরকে কে বা কারা তুলে নিয়ে গেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, পুলিশের কেউ মিজানুরকে তুলে আনতে যায়নি।

তনু হত্যা মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির কর্মকর্তারাও বলছেন, তাঁরাও নিখোঁজ মিজানুর রহমানের বিষয়ে কিছু জানেন না।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু খুন হন গত ২০ মার্চ। ওই দিন রাত সাড়ে ১০টায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে একটি ঝোপের মধ্যে তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় তাঁর বাবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের কর্মচারী মো. ইয়ার হোসেন কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন। গত ১৮ দিনেও এ মামলার কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।-প্রথম আলো।



মন্তব্য চালু নেই