১৪৭০০ বার অপ্রাসঙ্গিক বকেছেন এমপিরা, দায়িত্বে অবহেলা স্পিকারের

দশম সংসদের দ্বিতীয় থেকে ৬ষ্ঠ অধিবেশন তথা ২০১৪ সালের জুন থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ১৪ হাজার ৭৬৮ বার অপ্রাসঙ্গিক প্রসংশা-সমালোচনা করেছেন সংসদ সদস্যরা। এর মধ্যে নিজ দলের সাড়ে ৭ হাজার বার এবং সংসদের বাইরের এক রাজনৈতিক জোটের সমালোচনা করেছেন ৭ হাজার ২৬৮ বার।

রোববার রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কার্যালয়ে ‘পার্লামেন্টওয়াচ’ শীর্ষক এক প্রতিবেনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।

প্রসংশা ও সমালোচনার তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, অষ্টম সংসদের এই সময়ে সরকারি দলীয় সংসদ সদস্যরা নিজ দলের প্রসংশা করেছেন ৬২৬ বার, নবম সংসদে ৫৯৯ বার এবং এই সংসদে সরকার দলীয়দের পারস্পরিক প্রশংসার পরিমাণ বেড়েছে ১২ গুণ তথা ৭ হাজার ৫০০ বার। অপর দিকে অষ্টম সংসদে প্রতিপক্ষ দলের সমালোচনা করা হয়েছে ৪৯১ বার, নবম সংসদে ৮০৪ বার এবং বর্তমানে সংসদের বাইরে রাজনৈতিক এক জোটের সমালোচনা করা হয়েছে আগের তুলনায় ৯ গুণ তথা ৭ হাজার ২৬৮ বার।

টিআইবির ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০১৪ সালের জুন থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত দুটি বাজেট অধিবেশনে মোট ব্যয় হয়েছে ১৩৯ ঘণ্টা ৩৪ মিনিট। তবে ৮৫ জন সংসদ সদস্য কোনো বাজেট অধিবেশনে আলোচনায় অংশ নেননি। আবার যারা অংশ নিয়েছেন তারা এ আলোচনার মধ্যে অপ্রাসঙ্গিকভাবে নিজ দলের ও সরকারের কার্যক্রমের ওপর প্রশংসা করেছেন ১ হাজার ৬৩৮ বার এবং সংসদের বাইরে রাজনৈতিক জোটের কার্যক্রমের সমালোচনা করেছেন ১ হাজার ৪১৬ বার। এমনকি ষষ্ঠ অধিবেশনের মূল বাজেটের ওপর বক্তব্যে বরাদ্দ সময়ের ৩৫ শতাংশ সময়ই অপ্রাসঙ্গিক সমালোচনা ও প্রসংশায় ব্যয় হয়েছে।

রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ জ্ঞাপনের কিছু অংশ ছাড়া পুরো বক্তব্য জুড়েই প্রাধান্য পেয়েছে সমালোচনা ও অন্যদলের শাসনামলের কার্যক্রমের ব্যর্থতা। সেই সঙ্গে নিজ দলের ও সরকারের কার্যক্রমের প্রশংসা করেছেন সংসদ সদস্যরা। এসব বক্তব্য দিতে গিয়ে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয় উত্থাপন এবং অসংসদীয় ভাষার ব্যবহার করতে দেখা গেছে।

স্পিকারের ভূমিকা নিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কার্যপ্রণালী বিধি লঙ্ঘন করে সরকারি ও কথিত বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা বাইরের রাজনৈতিক জোটকে নিয়ে বিভিন্নভাবে কটাক্ষ করলেও স্পিকার এসব বিষয়ের ওপর রুলিং দেননি। অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের আলোচনার তার নীরব ভূমিকা দেখা যায়।

এছাড়া অধিবেশন চলাকালীন সময়ে নিজ আসন ছেড়ে অন্য আসনে অবস্থান নিয়ে অন্য সদস্যদের সাথে কথা বলা, সংসদ কক্ষের ভেতর বিচ্ছিন্নভাবে চলাফেরা করা, নামাজের বিরতির নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হয়ে অনেকক্ষণ ধরে বেল বাজার পর গ্যালারিতে সদস্যদের প্রবেশ করার মতো আচরণ দেখা গেছে। গ্যালারিতে শৃঙ্খলা রক্ষা করা স্পিকারের দায়িত্ব হলেও, তার দায়িত্বে অবহেলা দেখা গেছে।

বিরোধী দলের সমালোচনা করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংসদীয় কার্যক্রমে সরকার দলীয় সদস্যদের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে সংসদের বাইরের রাজনৈতিক জোটকে নিয়ে অপ্রাসঙ্গিক সমালোচনায় অসংসদীয় ভাষার ব্যবহার করেছে কথিত বিরোধী দল। সরকারের প্রশংসা ও অনুরোধ ছাড়া জোরালো কোনো সমালোচনা করতে দেখা যায়নি তাদের। সরকারি দলের কোনো সদস্য সম্পর্কে সংসদের বাইরে বিতর্ক হলেও, অধিবেশনে বিভিন্ন বিষয়ে মতামত প্রকাশের সময় সরকারি দলের লেজুড়বৃত্তি করতে দেখা গেছে।

সংসদকে অধিকতর কার্যকর করতে বেশ কয়েকটি সুপারিশও করেছে টিআইবি।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : অসংসদীয় আচরণ ও ভাষার ব্যবহার বন্ধে স্পিকারকে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে; সরকার এবং বিরোধী উভয় পক্ষকে অসংসদীয় আচরণ ও ভাষা পরিহার করতে হবে; সংসদে বিরোধী দলকে বিতর্কিত অবস্থান পরিহার করে প্রকৃত ভূমিকা পালনে উদ্যোগী হতে হবে; জনগণের সঙ্গে সংসদের সরাসরি সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য পিটিশন কমিটিকে কার্যকর করতে হব; সংসদ অধিবেশনে সদস্যদের উপস্থিতিসহ সংসদ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ তথ্য সুনির্দিষ্টভাবে ও সময়মত ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে; ওয়েবসাইটের তথ্য যথা সময়ে হালনাগাদ করতে হবে এবং বুলেটিনসহ বিভিন্ন প্রকাশনাকে আরও তথ্যবহুল করতে হবে; সংসদীয় কমিটির সুপারিশসহ কার্যবিবরণী জনগণ তথা সরকারি ও বেসরকারি রেডিও, টেলিভিশন এবং সংবাদপত্রসহ সকল গণমাধ্যমে সহজলভ্য করতে হবে।বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই