১৭ বছরেও পাহাড়ে আসেনি শান্তি

শান্তি চুক্তির দীর্ঘ ১৭ বছরেও পাহাড়ে শান্তি আসেনি। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার শান্তি চুক্তি করলেও পার্বত্যাঞ্চলে অস্ত্রের ঝনঝনানি এখনো থামেনি।

শান্তি চুক্তি বাতিল ও চুক্তি সংশোধনের দাবিতে সমঅধিকার আন্দোলন ও ইউপিডিএফ এবং চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে জনসংহতি সমিতির পাল্টাপাল্টি আন্দোলন আর সংঘাতে আজও উত্তাল পাহাড়ি জনপথ।

শান্তি চুক্তির ১৭বছর পূর্তি উপলক্ষে সমঅধিকার আন্দোলন ও জনসংহতি সমিতি তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়িতে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

চুক্তির পক্ষে অবস্থানকারী আওয়ামী লীগ ও জনসংহতি সমিতি শান্তি চুক্তির ১৭ বছর পূতি উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্যা লি, আলোচনা সভা এবং চুক্তি বাতিলের দাবিতে সমঅধিকার আন্দোলন নেতারা কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে।

অন্যদিকে পাহাড়ি-বাঙালি দু’পক্ষের দ্বন্দ্বের সুযোগে চাঁদাবাজি, অপহরণ এবং সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করে চলেছে অস্ত্রধারীরা। চাঁদাবাজি আর অপহরণ পার্বত্যবাসীর জীবনে নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদনকারী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বললেও জনসংহতি সমিতির নেতারা এটি সময়ক্ষেপণের তালবাহানা হিসেবে দেখছে। ভূমি সমস্যার সমাধান ছাড়া শান্তি চুক্তির বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরিয়ে আনতে ভূমি সমস্যা সমাধানে গঠিত ভূমি কমিশনকে কার্যকর এবং শান্তি চুক্তির সাংঘর্ষিক ধারাগুলোর সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন জেএসএস নেতারা।

অপরদিকে শান্তি চুক্তি বাতিল, পাহাড়ি-বাঙালি সমান অধিকার নিশ্চিত এবং ভূমি জরিপ কাজ সম্পাদন ছাড়া পার্বত্যাঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় বলে দাবি করেছে সমঅধিকার আন্দোলন পরিষদের নেতাকর্মীরা।

এছাড়াও তিন পার্বত্য জেলায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে শান্তি চুক্তির মৌলিক ধারাগুলোর সংশোধন জরুরি বলে দাবি করেছে পার্বত্য চুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে আবদ্ধ হয় জনসংহতি সমিতির শান্তি বাহিনীর সদস্যরা। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী তিন পার্বত্য জেলায় প্রায় দুই হাজার শান্তি বাহিনীর সদস্য অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। সরকার তৎকালীন সময়ে অস্ত্র সমর্পনকৃত শান্তিবাহিনীর সদস্যদের আর্থিক সহযোগিতা এবং যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি বিভিন্ন বিভাগে চাকরি দেন।

শান্তি চুক্তি হলেও পাহাড়ের প্রকৃত শান্তি এখনো ফিরে আসেনি। শান্তি চুক্তি নিয়েই খোদ পাহাড়িদের মধ্যে রয়েছে দ্বিধা বিভক্তি। শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি করছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি।

অপরদিকে চুক্তি সংশোধনের দাবিতে আন্দোলন করছে প্রসিত খিসা সমর্থিত ইউপিডিএফ। এই দুটি সংগঠন পাহাড়ে অসংখ্যবার ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। এ পর্যন্ত এদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাতে পাহাড়ে প্রাণ হারিয়েছে তিন শতাধিক মানুষ। আহত হয়েছে আরো কয়েক হাজার।

অপরদিকে বাঙালি সমর্থিত পার্বত্য সমঅধিকার আন্দোলন পরিষদ প্রথম থেকেই চুক্তির বিরোধিতা করে আসছিল। সমঅধিকার আন্দোলন এই চুক্তিকে কালো চুক্তি আখ্যায়িত করে চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকেই আন্দোলন করে আসছে।



মন্তব্য চালু নেই