২০১৬ সালেও চোখে দেখা যাবে না পদ্মা সেতু

আগামী বছরে (২০১৬ সাল) পদ্মাসেতু দৃশ্যমান হবার কথা থাকলেও কাজের ধীরগতির কারণে তা আর সম্ভব হবে না। পদ্মা সেতুর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন সংক্রান্ত পর্যালোচনা বৈঠকে এমন তথ্যই উঠে এসেছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। তবে বৈঠক শেষে পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিকল্পনা মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘পদ্মা সেতুর কাজ ঠিকমত হচ্ছে। এ সেতুর কাজে কোনো ধীরগতি নেই সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে শুনলাম। ইতোমধ্যে পাইলিং এর শুরু হচ্ছে।’

মঙ্গলবার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। বৈঠকে অংশগ্রহণ করা সেতু বিভাগের সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা  বলেন, ‘পদ্মা সেতুর জন্য এ অর্থবছরে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা ব্যয় করা যাবে। তবে ২০১৫ ও আগামী বছরেও পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হবে না।’

পদ্মাসেতুর কাজে বর্তমানে সেতু বিভাগ থেকে ১২ জন প্রকৌশলী ও রোড কনস্ট্রাকশন থেকে ৪ জন ‘ধার করা’ প্রকৌশলী আছে। এছাড়াও ৪ প্রকৌশলী সবসময়ের জন্য সেখানেই আছেন বলে ওই সচিব জানান। এ অর্থবছরে পদ্মাসেতুর জন্য বাজেটের সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী সচিবদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘নিম্ন দরদাতাদের আপনারা প্রকল্পের কাজ দেন। তাদের দেন ঠিক আছে, তবে কাজ শুরুর কিছুদিন পর আবার সংশোধনীর জন্য আসেন। এসব মেনে নেয়া যায় না। যারা ভাল কাজ করেন তাদের কাজ দেন। প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো সমসা হলে সরাসরি আমাকে ফোন দিবেন।’

কোনো নতুন প্রকল্প শেষ হলে এর আর কোনো অঙ্গ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হবে না। এর জন্য নতুন করে কোনো অর্থও বরাদ্দ দেয়া হবে না। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নে গতানুগতিক ধারা থেকে বের হয়ে না আসতে পারলে প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রগতি আসবে না বলেও বৈঠকে জানান তিনি।

বৈঠক সূত্রে আরো জানা যায়, সরকারি কেনাকাটার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সরকারি কেনাকাটা জন্য প্রকল্পর কাজ শুরু হওয়ার আগে থেকে টেন্ডার বিক্রি করতে হবে।’

দক্ষতা না বাড়ানো গেলে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ নিম্নমুখী হবে। উদাহারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘৩৯ হাজার কোটি টাকার মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পের মত বড় প্রকল্পগুলো কয়জন পিডি দক্ষতার সঙ্গে করতে পারবেন এ নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।’

বৈঠক সূত্রে আরো জানা যায়, এডিপি বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাগারাগি করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী। এ সময় সবাইকে দ্রুত এডিপি বাস্তবায়নে কাজ করার নানা পরামর্শ দেন।

এছাড়া এডিপি নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘কী কারণে এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি আমরাও এর সঠিক কারণ জানি না। গত ৩ মাস ধরে বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তার কাজ হয়নি। অনেকেই আবার বলছেন পাথর পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে তাদের কাজের অগ্রগতি হচ্ছে না। আমি তাদের উদ্দেশে বলেছি পাথর নাই, তাই বলে তো কাজ বন্ধ থাকবে না। পাথর পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন আমদানি করার চেষ্টা করেন। পৃথিবীর কোথাও না কোথাও তো পাথর আছে।

পরিকল্পনা কমিশনের মূল্যায়ন ও পরীবেক্ষণ বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে জানা যায়, অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তিনমাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, উন্নয়ন বাজেটের সর্বাধিক বরাদ্দপ্রাপ্ত ১০টি মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের গড় হার শতকরা মাত্র ৭ ভাগ।এ অর্থবছরে এডিপির আকার ধরা হয়ে ১ লাখ কোটি টাকা।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রায় ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকায় প্রথম পদ্মাসেতু প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়। ২০১১ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। চলতি বছরে অনুমোদিত প্রথম সংশোধিত প্রকল্প উন্নয়ন প্রস্তাবের (ডিপিপি) তুলনায় দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপিতে ৮ হাজার ২শ ৮৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বাড়ানো হয়। এতে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭শ ৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকায়।

জানুয়ারি ২০০৯ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সাল। পরে সময় বৃদ্ধি বাস্তবায়নকাল নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২০ সাল পর্যন্ত।

প্রসঙ্গত, মূল প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাইকা ও ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দাতারা সরে যাওয়ার ঘোষণা দিলে জটিলতা তৈরি হয়। পরবর্তীতে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সরকার বিশ্বে নিজেদের সক্ষমতাও প্রমাণ করতে চায় বলে জানা যায়।বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই