২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা সুজনের

২০১৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।

বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সুজন আয়োজিত `ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের হালচাল ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সুজনের কর্মকর্তারা এ আশঙ্কা ব্যক্ত করেন।

লিখিত বক্তব্যে সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন জনগণের দৃষ্টি কেড়েছে। কারণগুলো হলো- ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানি, মনোনয়ন বাণিজ্যের ব্যাপকতা, রেকর্ড সংখ্যক ইউনিয়নে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া, একটি বড় রাজনৈতিক দল কর্তৃক অনেক ইউনিয়নে প্রার্থী দিতে না পারা, এক দলকেন্দ্রিক ফলাফল, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হামলা-নির্যাতন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এক কথায় বলতে গেলে, ব্যাপক অনিয়মের কারণে এই নির্বাচন এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ফলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।’

নির্বাচনী সহিংসতায় প্রাণহানি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এবার নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত নির্বাচনপূর্ব, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচনপরবর্তী সংঘর্ষ এবং নির্বাচনকেন্দ্রিক বিরোধের জেরে এ পর্যন্ত ৭১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আহতের সংখ্যা ছয় সহস্রাধিক। প্রাণহানির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, প্রথম ধাপের নির্বাচনের আগে ১০ জন, প্রথম ধাপের নির্বাচনের দিন ১১ জন, প্রথম ধাপের নির্বাচনের পর থেকে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের আগে পর্যন্ত ১১ জন, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের দিন ৯ জন, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের পর থেকে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ১৭ জন, তৃতীয় ধাপের নির্বাচনের দিন ৫ জন, তৃতীয় ধাপের নির্বাচনের পর থেকে এ পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।’

দিলীপ কুমার সরকার বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া সম্পর্কে বলেন, ‘চেয়ারম্যান পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি ইতিমধ্যেই সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। ইতিপূর্বে ১৯৮৮ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১০০ জন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন বলে জানা গেছে। প্রথম ধাপ থেকে শুরু করে চতুর্থ ধাপের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ও প্রত্যাহারের পর এই সংখ্যা ১৫০-এ দাঁড়িয়েছে। প্রথম ধাপে ৫৪ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৩৪ জন, তৃতীয় ধাপে ২৯ জন এবং চতুর্থ ধাপে ৩৩ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এরা সকলেই ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী।

অপরদিকে চার ধাপে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থীশূন্য ছিল বা আছে ৩৮৮টি ইউনিয়নে। প্রথম ধাপে ১১৯, দ্বিতীয় ধাপে ৭৯ এবং তৃতীয় ধাপে ৮১টি ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী ছিল না। চতুর্থ ধাপেও ১০৯টি ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী নেই বলে জানা গেছে। অনেক স্থানে ভয়-ভীতি প্রদর্শন, মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা প্রদান, মনোনয়নপত্র কেড়ে নেওয়া বা ছিঁড়ে ফেলার কারণে বিএনপি প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। কেউ কেউ মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও চাপ সৃষ্টির কারণে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘ইউপি নির্বাচনে অস্বাভাবিক হারে ভোট পড়ারও অভিযোগ উঠেছে কোথাও কোথাও। প্রথম ধাপের নির্বাচনে ছয়টি ইউনিয়নে এবং তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে সাতটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৯০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিটি ধাপের নির্বাচনের আগেই প্রতিপক্ষের এজেন্টদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়া বা ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া; বুথ দখল করে ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্সে ভরা; চেয়ারম্যান প্রার্থীর ব্যালটে প্রকাশ্যে ভোট দিতে বাধ্য করা; নির্বাচনী কর্মকর্তা কর্তৃক ব্যালট পেপারে সিল মারা বা সিল মারতে সহায়তা করা; ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ইত্যাদি ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের কারণে তিন ধাপে মোট ১৩৯টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। কোনো কোনো ইউনিয়নে নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।’

সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা ও অনিয়মের ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া চেয়ারম্যান পদে প্রায় ১৫০ জনের বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। এর মাধ্যমে খারাপ নির্বাচনের একটি নজির সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রথম ধাপ। তাই সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।’ মনোনয়ন বাণিজ্য রোধে দলীয় প্যানেল থেকে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমরা বিকৃত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন লক্ষ করেছি। নির্বাচনে সহিংসতা ও অনিয়মের পাশাপাশি বর্তমানে প্রকাশ্যে অস্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য অশনিশঙ্কেত।’

তিনি বলেন, ‘শুধু নির্বাচনের দিনকে বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বললে হবে না। বরং নির্বাচনের আগে-পরে কী ঘটছে, নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হচ্ছে কি না এবং সবাই প্রার্থী হতে পারছে কি না ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দীন খান। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন সুজন জাতীয় কমিটির সদস্য মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর।



মন্তব্য চালু নেই