২১ জেলার স্বপ্নযাত্রার উদ্বোধন

বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামোর কাজের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার স্বপ্নযাত্রার উদ্বোধন হলো।

শনিবার বেলা পৌনে ১টায় মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা সেতুর ৭ নম্বর পিলারের কাছে মূল সেতুর কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল পদ্মা সেতু। নিজস্ব অর্থায়নে এটি এ পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এর জন্য খরচ হবে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা। এই সেতু হলে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত হবে দক্ষিণাঞ্চল। এই সেতুতে ট্রেনও চলবে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধিও বাড়বে।

পদ্মা সেতুর মূল কাজের উদ্বোধনের আগে শরীয়তপুরের জাজিরায় ফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে এর নদীশাসন কাজের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।

এ সময় প্রধনমন্ত্রী বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ চিরদিন অবহেলিত ছিল। এই সেতুর মাধ্যমে এখানকার মানুষের জীবনমান উন্নত হবে। এগিয়ে যাবে অর্থনীতি।’

তিনি আরো বলেন, ‘এ সেতু নির্মাণে অনেক বাধাবিপত্তি অতিক্রম করতে হয়েছে। আমরা প্রমাণ করেছি, বাংলাদেশ নিজেও পারে। কারো কাছে হাত পেতে নয়, জনগণের সহযোগিতায় তৈরি হচ্ছে স্বপ্নের এই সেতু।’

এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় সফরসঙ্গীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে জাজিরার উদ্দেশে রওনা হন।

প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের দোগাছি এলাকা থেকে শুরু করে মাওয়া চৌরাস্তা পর্যন্ত দীর্ঘ এলাকা সেজেছে বড় আকারের বিলবোর্ড, ব্যানার ফেস্টুন আর তোরণে।

1233

মধ্যাহ্ন বিরতি শেষে লৌহজংয়ে মাওয়া ঘাট-সংলগ্ন খানবাড়ি ও উত্তর মেদিনীমণ্ডলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন শেখ হাসিনা। জনসভা শেষে তিনি হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় ফিরবেন।

পদ্মার মাওয়া পাড় থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরত্বে নদীর মধ্যে অবস্থিত ৭ নম্বর ব্লক। যেটিকে পুরোপুরি প্রস্তুত করে তোলা হয়েছে মূল পাইলিংয়ের জন্য। ইতিমধ্যে নদীতে নিয়ে আসা হয়েছে ১৩৫ মিটার দৈর্ঘ্যের পাইল। নদীর পাড়ে জড়ো করা হয়েছে অন্য পাইলগুলোও। পর্যায়ক্রমে ৪১টি পিলারের ওপর নির্মাণ করা হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের পদ্মা সেতু।

এর আগে মার্চ মাসে টেস্ট আর আগস্ট মাসে ট্রায়াল পাইল থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা হয়েছে মূল পাইলের নকশা। এক একটি পাইলকে নদীর তলদেশে পাঠানো হবে অত্যাধুনিক সব হ্যামার আর ক্রেন দিয়ে। এ জন্য ব্যবহার করা হবে চারটি আধুনিক ফ্লোটিং ক্রেন। এ ছাড়াও প্রায় ১০০টি ছোট-বড় ক্রেন এবং বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দুটি হাইড্রোলিক হ্যামারও প্রস্তুত। পদ্মার দুই পারের মানুষগুলোর মতোই অপেক্ষার পালা শেষ সংশ্লিষ্টদেরও।

সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, ৪২টি পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে থাকবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ এ সেতু। এ ছাড়া দেড় কিলোমিটার করে উভয় পাড়ে তিন কিলোমিটার সংযোগ সেতুর জন্য আরো ২৪টি পিলার থাকবে। সেতুর ৪২টি পিলারে মোট ২৪০টি এবং দুই পাড়ের ১২টিতে ২৪টি পাইল বসানো হবে। সর্বমোট ২৬৪টি পাইল হবে। পাইলিংয়ের যন্ত্রপাতি সাজানোর কাজ চলছে। পাইল ড্রাইভিংয়ের পরই পদ্মা সেতুর ওপরের অংশের কাজ শুরুর প্রস্তুতি চলছে। এ ছাড়া নদীর দুই পাড়ে কয়েক লাখ ব্লক তৈরি করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে নদীশাসনের কাজের জন্য। নদীশাসনের কাজও এগিয়ে চলছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, মোট পাঁচটি প্রধান ভাগে হচ্ছে পদ্মা সেতুর কাজ। এখন পর্যন্ত মূল সেতু নির্মাণের ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং নদীশাসনের ১৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া সংযোগ সড়কের মধ্যে শরীয়তপুরের জাজিরায় ৫৯ শতাংশ এবং মাওয়ায় ৬৩ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রধান শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের মোট কাজের ২৭ শতাংশ শেষ হয়েছে। কাঙ্ক্ষিত গতিতে সেতুর কাজ চলছে। যেভাবে কাজ চলছে তাতে নির্ধারিত সময় ২০১৮ সালের শেষেই এর কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।’

উল্লেখ্য, পদ্মা সেতুর মোট দৈর্ঘ্য হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দ্বিতল এ সেতুর পুরোটা হবে স্টিল আর কংক্রিট স্ট্রাকচারে। সেতুর ওপরের তলায় থাকবে চার লেনের মহাসড়ক আর নিচ দিয়ে যাবে রেললাইন।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ, চীনের চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন, সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান আবদুল মোমেন লি. ও মালয়েশিয়ার এইচসিএমের মাধ্যমে মূল সেতু, নদীশাসন ও অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ বাস্তবায়ন চলছে। বিশ্বব্যাংকের ঋণ ছাড়াই নিজস্ব অর্থায়নে এ সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত সরকারের জন্য ছিল বিশাল চ্যালেঞ্জ। শেষ পর্যন্ত সে চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে স্বপ্নের সেতুটি নির্মাণের দিকে সরকার সফলভাবে এগিয়ে যাওয়ায় পদ্মার দুই পারের মানুষের মাঝে খুশির জোয়ার বইছে।



মন্তব্য চালু নেই