২৫৬ বছরের এই মানুষটি মৃত্যুর আগের মুহূর্তে যে মারাত্মক কথা বলে গিয়েছিলেন

খুব ব্যতিক্রমী কোনও জীবনদর্শনের অধিকারী না হলে কমবেশি প্রতিটি মানুষেরই মনোবাসনা থাকে দীর্ঘজীবী হওয়ার। কিন্তু আয়ুর দীর্ঘতা বলতে ঠিক কতটা দীর্ঘ বোঝায়? ৯০, ১০০ কিংবা খুব বেশি হলে ১০০-১১০ বছর? কিন্তু যথার্থই দীর্ঘজীবী মানুষ বলতে কী বোঝায় তা বুঝতে হলে আপনাকে জানতে হবে চায়নার লি চিং ইউয়েনের কথা, যিনি ২৫৬ বছর জীবিত ছিলেন।

লি-এর কথা বৃহত্তর পৃথিবীর কাছে প্রথম প্রকাশ্যে আসে দা নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত একটি আর্টিকেল মারফত। ১৯৩০ সালে প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনে জানানো হয়, লি-এর বয়স ২৫৩ বছর। লি-এর নিজের দাবি ছিল, তাঁর জন্ম ১৭৩৬ সালে। আর টাইমস-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল একটি বিশেষ নথির কথা, যা থেকে জানা গিয়েছিল, লি ১৬৭৭ সালে জন্মেছেন। সেই নথিকেই সত্যি বলে মেনে নিয়ে টাইমসের সেই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, লি ২৫৩ বছর বয়সি। যদি লি-এর নিজের দাবিও সত্য হয় তাহলেও প্রতিবেদন রচিত হওয়ার সময়ে তাঁর বয়স ছিল ১৯৪ বছর।

টাইমসের আবিষ্কৃত সেই নথির সত্যতা অবশ্য সংশয়ের ঊর্ধ্বে নয়। প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়, চেংগদু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উ চাং চিয়েহ নাকি ১৮২৭ সালে লেখা লি-এর ১৫০ তম জন্মদিনের শুভেচ্ছাপত্র এবং ১৮৭৭ সালে লেখা লি-এর ২০০ বছরের শুভেচ্ছাপত্র আবিষ্কার করেছেন। সেই হিসেবেই তাঁর জন্মসাল ১৬৭৭ বলে ধরে নেওয়া হয়। লি অবশ্য নিজেও তাঁর জন্মসাল সংক্রান্ত দাবির সপক্ষে কোনও গ্রহণযোগ্য প্রমাণ দিতে পারেননি। তবু টাইমস-এর সেই প্রতিবেদনের সুবাদে লি-কেই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশিদিন জীবিত থাকা মানুষ বলে মনে করা হয়। জানানো হয়, লি নাকি তাঁর আশেপাশে বসবাসরত রীতিমতো বৃদ্ধ লোকেদেরও ‘সেদিনের ছোকরা’ বলে ঠাট্টা মস্করা করে থাকেন। এবং নিজেকেই পাড়ার একমাত্র ‘প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ’ বলে মনে করেন।

১০ বছর বয়সে একজন আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করা শুরু করেন লি। বছর চল্লিশেক সেই কাজই করেন তিনি। একটা বয়সের পর তাঁর দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস হয়ে যায় গতে বাঁধা। প্রতিদিন গোজি বেরি, লিংগজি, বন্য জিনসেং, হি শু য়ু, গোটুকোলা, আর ভাত থেকে তৈরি মদ খেয়ে তিনি ক্ষুণ্নিবৃত্তি। জীবনভর আর কোনও খাবার নাকি মুখেই তোলেননি তিনি। জীবন সম্পর্কে কোনও বৈরাগ্য অবশ্য তাঁর ছিল না। জীবনে ২৩টি বিয়ে করেছিলেন, সন্তান-সন্ততির সংখ্যা ছিল দু’শোর বেশি।

লি মারা যান ১৯৩৩ সালে। হিসেব মতো তাঁর বয়স তখন ২৫৬ বছর। মৃত্যুর আগে তিনি নাকি ভারি অদ্ভুত একটা কথা বলে গিয়েছিলেন সামনে উপস্থিত মানুষজনকে। বলেছিলেন, ‘বহুদিন বাঁচতে চাও? তাহলে মনকে শান্ত করো, একটা কচ্ছপের মতো স্থিতধী হও, তৎপর হও পায়রার মতো, আর একটা কুকুরের মতো ঘুমোও।’ মৃত্যুর আগে এক মারাত্মক গভীর জীবনসত্যেরই আভাস দিয়ে গিয়েছিলেন লি। -এবেলা।



মন্তব্য চালু নেই