২৮ বছর পর মাকে খুঁজে পেল ২ মেয়ে

২৮ বছর আগে মা নাজিয়া সাইদের ( বর্তমান বয়স ৬০) কাছ থেকে আলাদা গিয়েছিল দুই মেয়ে আয়েশা (বর্তমান বয়স ৩৩) এবং ফাতিমা (৩২)। সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাস করত তারা। ১৯৮৮ সালে নাজিয়াকে তালাক দিয়ে দেশে ফেরার টিকিট ধরিয়ে দেয় তার আরব আমিরাতের স্বামী। আয়েশা এবং ফাতিমা থেকে গিয়েছিল সেখানে।

নাজিয়ার বাড়ি ভারতের হায়দারাবাদে। মায়ের খোঁজে চলতি বছরের জানুয়ারিতে হায়দারাবাদে আসে দুই মেয়ে। জেলা পুলিশ সুপারের (ডিএসপি) সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা। মাকে খুঁজে দিতে পুলিশের কাছে আবেদন জানায় তারা।

হায়দারাবাদের ডিএসপি বলেন, ‘পুরনো একটি ছবি দেখিয়ে তারা আমার সাহায্য চায়। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো বলে তাদের প্রতিশ্রুতি দেই। আমরা পুরনো শহরে ছবির কপি প্রচার করে দেই। অসংখ্য লোকজনের মধ্য থেকে আমরা তাদের মাকে খুঁজে বের করি।’

৬০ বছরের নাজিয়া সাইদ তার মেয়ে আয়েশা ও ফাতিমাকে ১৯৮৮ সালে শেষবার দেখেছিলেন। তখন তিনি দুবাইয়ে স্বামী ওবায়েদ মাসমেরির সঙ্গে থাকেন। ১৯৮১ সালে ভারতে এসেছিলেন ওবায়েদ। তখন সে নাজিয়াকে বিয়ে করে এবং স্ত্রীকে নিয়ে আরব আমিরাত চলে যায়। সেখানে গিয়ে নাজিয়া জানতে পারে সাইদের আরেক স্ত্রী আছে।

স্বামীর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী হয়ে প্রবল অশান্তির মধ্যে জীবন কাটত। পরপর কন্যা সন্তান হওয়ায় নাজিয়াকে তালাক দিয়ে ভারতে পাঠিয়ে দেয় তার স্বামী। দেশে ফেরার কয়েক বছর পর নাজিয়ার সঙ্গে কর্ণাটকের এক ফল ব্যবসায়ীর বিয়ে হয়। এই পক্ষে দুই পুত্র ও এক কন্যার মা তিনি।

এদিকে দুবাইতে বড় হওয়া আয়েশা ও ফাতিমা কোনোভাবেই মাকে ভুলতে পারেনি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর তারা ভারতে আসে। পুলিশের কাছে সব শুনে অবাক হয়ে যান নাজিয়া। দুবাইতে ছেড়ে আসা তার দুই কন্যার মুখ মনেই ছিলনা তার। শুধু জানতেন তার ছোট মেয়ের এক হাতে ৬টি আঙুল ছিল। সেটা জানতে পেরে হায়দারাবাদ পুলিশের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় আয়েশা ও ফাতিমার সঙ্গে।

ফাতিমা জানান, তার হাতে ৬টি আঙুল ছিল। কয়েক বছর আগে সেটি অপারেশন করে বাদ দিয়েছেন। আবার হায়দারাবাদে আসেন আয়েশা ও ফাতিমা। দেখা হয় তাদের মায়ের সঙ্গে। হাতের ছয় আঙুল চিনিয়ে দিল ছোট মেয়েকে। তা নাহলে হয়তো ডিএনএ টেস্ট করাতে হতো। অবশেষে জন্মের পর প্রথমবারের মাতো মাকে আবেগে জড়িয়ে ধরল দুই মেয়ে।

কত বড় হয়ে গেছে মেয়েরা! ভাবতেই পারছেন না মা নাজিয়া। ২৮ বছর পর মেয়েদের কাছে পেয়ে আবেগে আপ্লুত তিনি। উচ্ছসিত দুই মেয়ে। তারা অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন হায়দারাবাদ পুলিশকে। আয়েশা বলেন, ‘আমরা ভাবতেই পারিনি জীবদ্দশায় মায়ের দেখা পাবো। এটা অলৌকিকের চেয়ে কম না।’



মন্তব্য চালু নেই