২ কিলোমিটার খাল খনন বদলে দিয়েছে মাগুরার কৃষকদের ভাগ্য

মোঃ কাসেমুর রহমান শ্রাবণ, মাগুরা প্রতিনিধি : মাগুরায় ২ কিলোমিটার খান খননের ফলে শালিখা উপজেলার নরপতি ও সদর উপজেলার হাজিপুর এলাকার ২০টি গ্রামে জলবদ্ধতা নিরসনের পাশাপশি ৫০০ হেক্টর জমি সেচ সুবিধার আওতায় এসেছে। সেইসাথে জলাবদ্ধতা নিরসনের কারণে শুধুমাত্র এসব এলাকায় ধান মৌসুমে ৩ হাজার টন অতিরিক্ত ধান উৎপন্ন হবে। কৃষি মন্ত্রনালয়ের অধিন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পরেশন বিএডিসি জলবদ্ধতা দূরীকরণ ও ক্ষুদ্রসেচ উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

বিএডিসির কর্মসূচি পরিচালক কামরুজ্জামান জানান- ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে মাগুরা জেলার সদর, শালিখা ও মহম্মদপুর উপজেলার ৩০ কিলোমিটার খাল পুঃখন্ন করা হচ্ছে। এর ফলে এসব এলাকার জলবদ্ধতা যেমন দুর হবে তেমনি এর মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরশণ, বিলের পানি সংরক্ষণ,নিস্কাশন ও সেচ অবকাঠামো নির্মানের মাধ্যমে খাল ও বিলপার্শবর্তী কৃষকরা পানি সেচ কাজে ব্যবহার ও মৎস্য চাষ করতে পারবে।

কৃষি মন্ত্রনালয়ের সহকারি প্রধান সায়েমুর রশিদ খান জানান- বর্তমান সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে দেশকে খাদ্যে সয়ংসম্পন্ন করে গেড়ে তোলা। এ কারনে অনুন্নত বাজেট থেকে বিএডিসির মাধ্যমে জলবদ্ধতা দূরীকরণ ও ক্ষুদ্রসেচ উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় মাগুরা জেলার সদর, মহম্মদপুর ও শালিখা এ তিন উপজেলার জলাবদ্ধপ্রবণ বিল এলাকায় সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের আওতায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ ধরণের খাল খননের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। যা থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকদের ১১ হাজার ২৫০ হেক্টর কৃষি জমিতে ভূমির উপরিভাগের পানি ব্যবহার করে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। যার ফলে অতিরিক্ত ৬০ হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপন্ন হবে।

প্রকল্প এলাকা শালিখার নরপতিতে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে সদ্য খননকৃত এক কিলোমিটার খাল খননের ফলে এলাকার কৃষকরা ইতিমধ্যে ইতিবাচক ফল পেতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে চলতি আউস ও আমন মৌসুমে জমিতে সেচ সেচ সুবিধা নিশ্চিত হওয়ায় তারা আনন্দিত। এছাড়া চলতি পাট মৌসুমে তারা সংশ্লিষ্ট খালেই তাদের পাট পঁচাতে ও ধুতে পারছেন।

প্রকল্প বাসতবায়ন কর্মকর্তরা জানান-সংশ্লিষ্ট এক কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি কুচিয়ামোড়ার মধ্য থেকে যাওয়া ফটকি নদীর সাথে সংযুক্ত হয়েছে। পাশাপশি মান্দার মাঠ থেকে নরপতি পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়েছে। এই খালের ফলে আড়পাড়া ইউনিয়নের জুনারী, রাজধরপুর, দীঘি, কুমোরকোটা, নরপতি, বুনাগাতি ইউনিয়নের বরইচারা, হাটবাড়িয়া, রাজাপুর, সদর উপজেলার হাজিপুরসহ কুচিয়ামোড়া ইউনিয়নের কুল্লিয়া কুচিয়ামোড়া ও বুরাইল বিল এলাকার অপরিনামদর্শী জলাবদ্ধতা নিরসন হওয়ার পাশাপাশি খালের পানির মাধ্যমে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করা গেছে। ৩ বছরের মধ্যে ৩ উপজেলায় প্রস্তাবিত ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল খনন করা সম্ভব হলে ১১হাজার ২৫০ হেক্টর জমির সেচ সুবিধা বৃদ্ধি ও জলাবদ্ধতা নিরসনের ফলে ৬০ হাজার মেট্রিকটন অতিরিক্ত ধান উৎপাদন কৃষকের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। প্রায় ৪০ হাজার কৃষক এ প্রকল্পের উল্লেখিত সুবিধা ভোগ করবেন। এক সময় মাগুরাসহ আশপাশের জেলায় দেশীয় মাছের অধিকাংশের যোগান আসত নরপতি বগনাল খাল, ফটকি নদী, বুরাইল বিল থেকে। কিন্তু খাল খনন না করায় নাব্যতা হারানোর কারণে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। কৃষকের সেচ সুবিধার পাশাপাশি এ খাল খননের কারণে আগামীতে আবার এ এলাকা থেকে দেশীয় মাছের যোগান বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।

এ এলাকার কৃষক নিতাইরায় ও বিকাশ বিশ্বাস জানান- এ খাল খননের ফলে ফটকি নদীর জোয়ারের পানি ওই খালে আসার সুযোগ পাচ্ছে। পাশাপাশি তাদের বিল এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের সুযোগ হয়েছে। যেখানে আগামী কার্তিকে তারা ফসল আবাদের আশা করছেন।



মন্তব্য চালু নেই