৩১ জুলাই মধ্যরাত থেকে ছিটমহল বিনিময়

আগামী ৩১ জুলাই মধ্যরাত থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় শুরু হবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে চুক্তি অনুসমর্থনের দলিল বিনিময়ের দুদিনের মধ্যে উভয় দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হলো। দুদেশের মধ্যে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে উভয় দেশের ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় হবে। এতে প্রায় ৫১ হাজার ছিটমহলবাসী মানুষের অনেক বিড়ম্বনার অবসান হবে।

উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালে ইন্দিরা-মুজিব সীমান্ত চুক্তি হয়। এর পর ২০১১ সালে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় চুক্তিটির প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়। ভারতীয় পার্লামেন্টে গত মাসে সেটি অনুমোদন হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরকালে সীমান্ত চুক্তির অনুসমর্থনের দলিল বিনিময় হয়। আজ ঘোষণা করা হলো ছিটমহল বিনিময়ের দিনক্ষণ। দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবের বিনিময় করা চিঠি ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।

ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ছিটমহল বিনিময় শুরুর চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরুর আগে এসব ছিটমহল দুই দেশের কর্মকর্তারা যৌথভাবে পরিদর্শন করবেন।

ছিটমহল বিনিময়ের জন্য ভারতের সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হওয়ায় এই সমস্যা ঝুলে ছিল দশকের পর দশক।
দুই দেশের সীমান্ত সমস্যার সমাধানকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে মোদি তার সফরের শেষ বক্তব্যে বলেন, ‘সারা বিশ্ব হয়তো জমির জন্য যুদ্ধ করতে পারে, কিন্তু আমরা দুটি দেশ জমিকে সম্পর্কের সেতু হিসেবে ব্যবহার করেছি।’

বর্তমানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিটমহল রয়েছে। এতে ৩৭ হাজার মানুষের বসবাস। অন্যদিকে ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের বাসিন্দা ১৪ হাজার। ২০১১ সালে দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে শুমারিতে এ তথ্য পাওয়া যায়। ভারতের ভেতরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের আয়তন মোট ৭ হাজার ১১০ একর। অন্যদিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিটমহলের আয়তন ১৭ হাজার ১৬০ একর। চুক্তি কার্যকর হলে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ভারতের অংশ হয়ে যাবে। আর ভারতের ১১১টি ছিটমহল অংশ হয়ে যাবে বাংলাদেশের। এগুলোর মধ্যে লালমনিরহাট জেলায় ৫৯টি, পঞ্চগড় জেলায় ৩৬টি, কুড়িগ্রাম জেলায় ১২টি, নীলফামারী জেলায় ৪টি ভারতীয় ছিটমহল রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ছিটমহলবাসী তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী নাগরিকত্ব বেছে নিতে পারবেন।

ছিটমহল বিনিময়ের ফলে বাংলাদেশ ১০ হাজার একর জমি বেশি পাবে। অন্যদিকে অপদখলীয় জমি হস্তান্তরের ফলে ভারত ২৭৭৭ একর জমির মালিকানা পাবে। আর ২২৬৭ একর জমির উপর বাংলাদেশের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবে। এতে ভারত প্রায় ৫০০ একর জমি বেশি পাবে।

উল্লেখ্য, উত্তরাধিকার সূত্রে ভারতের সঙ্গে স্থল সীমান্ত নিয়ে সমস্যায় ভুগছিল বাংলাদেশ। অবিভক্ত ভারতের অংশ থেকে পাকিস্তান এবং পরে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই সমস্যার অবসানে ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হয়।



মন্তব্য চালু নেই