ঈদের বিশেষ সার্ভিসের টিকিট বিক্রি শুরু

৩ দিন আগেই শেষ ৬০ ভাগ টিকিট

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে শুক্রবার থেকে বাসের অগ্রিম টিকিট শুরু হলেও পরিবহন কোম্পানিগুলোর রেগুলার (নিয়মিত) সার্ভিসের ৬০ ভাগেরও বেশি টিকিট বিক্রি শেষ হয়েছে তিন দিন আগেই।

ঈদ উপলক্ষে পরিবহণ কোম্পানিগুলোর বিশেষ সার্ভিসের টিকিট শুক্রবার সকালে বিক্রি শুরু হয়। যা চলবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত।

১০ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) রাজধানীর রাজারবাগ, ফকিরাপুল ও আরামবাগে বিভিন্ন বাস কোম্পানির কাউন্টারে যোগাযোগ করা হলে এই তথ্য পাওয়া যায়। ঈদ উপলক্ষে বাস কোম্পানিগুলো নিয়মিত সার্ভিসের মধ্যে এসি ভলবো সার্ভিসের শতভাগ টিকিট বিক্রি শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে। আর নন-এসি চেয়ার কোচেরও প্রায় ৬০ ভাগ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানা যায়।

হানিফ এন্টারপ্রাইজের আরামবাগ কাউন্টারের ব্যবস্থাপক মো. আবদুল আলিম বলেন, ‘আরামবাগ কাউন্টার থেকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে এসি ভলভো (এসকানিয়া) বাস চলাচল করে। আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরের মধ্যে সব টিকিটই প্রায় শেষ হয়েছে গেছে। এখন প্রতিটি গাড়ির শেষের সারির দুই একটি করে সিট খালি রয়েছে। এছাড়া এখান থেকে দক্ষিণাঞ্চলে (খুলনা-যশোর-মাগুরা-বাগেরহাট) চলাচলকারী এসি ভলবো (আরএম-থ্রি) সার্ভিসেরও শতভাগ টিকিট বিক্রি শেষ।’

আলিম বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে আমাদের এসি সার্ভিসের বিশেষ কোনো গাড়ি থাকে না। যদি কোনো গাড়ি নির্দিষ্ট সময়ের আগে ঢাকায় যাত্রী পৌঁছে দিয়ে গাড়িগুলো ঢাকায় পৌঁছাতে পারে তখন আমরা বিশেষ সার্ভিসের কথা চিন্তা করি।’হানিফ এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক মো. তোফাজ্জল হোসেন রিপন শুক্রবার সকালে বলেন, ‘আমাদের কোম্পানিতে এসি ও ননএসি মিলিয়ে সবসময় চার’শ গাড়ি চলাচল করে। এরমধ্যে ২০টি ভলভো (এসকানিয়া) বাস চলাচল করে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে। এছাড়া উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে আরও প্রায় ২০টি এসি ভলবো (আরএম-থ্রি) চলাচল চলাচল করে। অন্যান্য দিনের মতো ঈদের আগের চার দিনের আমাদের রেগুলার সার্ভিসের প্রায় সব টিকিটই বিক্রি শেষ। আজ (শুক্রবার) থেকে থেকে বিশেষ সার্ভিসের অগ্রিম টিকিট ছাড়া হয়েছে।’

মতিঝিলের ঈগল পরিবহণের কাউন্টার ম্যানেজার আনিসুর রহমান জানান, ‘বৃহস্পতিবারের মধ্যে আমাদের খুলনা, যশোর, সাতক্ষিরা রুটের প্রায় সব টিকিটই বিক্রি শেষ হয়েছে। এসি, নন-এসি প্রায় সব ধরণের গাড়িতে দুই একটা করে সিট খালি আছে। তবে শুক্রবার বিশেষ সার্ভিসের টিকিট বিক্রি শুরু হয়।’

আনিসুর রহমান বলেন, ‘বিশেষ সার্ভিস বলতে আমরা রেগুলারের বাইরে গ্যারেজে থাকা (সার্ভিসিং করানো) গাড়িগুলোকে নামানোকে বুঝাই। তাছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের আগে যদি কোনো গাড়ি যাত্রী পৌঁছে দিয়ে আবার ঢাকা আসতে পারে তাহলে সেই গাড়িগুলোকেও স্পেশাল সার্ভিস হিসেবে ব্যবহার করি।’তিনি বলেন, ‘আসলে স্পেশাল সার্ভিসে আমরা গাড়ির সংখ্যা আগে থেকে নির্ধারণ করতে পারি না। কারণ এটা মহাসড়ক ও বিভিন্ন ফেরিঘাটের যানজটের উপর অনেক অংশে নির্ভর করে। দেখা যায়, স্বাভাবিকের চেয়ে একটা গাড়ি ট্রিপ শেষ করতে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় বেশি লাগে। আবার ফেরার সময়ও একই অবস্থা। যদি রাস্তা ক্লিয়ার থাকে তাহলে কোনো সমস্যা হয় না। আমরা ঈদের আগের দিন পর্যন্ত স্পেশাল সার্ভিসের গাড়ি ছাড়ব। এসব গাড়ির টিকিট যাত্রীরা ওই দিনই কাউন্টার থেকে নিতে পারবেন।’

রাজধানীর গাবতলী, কল্যাণপুর ও শ্যামলীর কাউন্টারগুলোতে শুক্রবার সকাল থেকেই ঈদের আগাম টিকিটের জন্য যাত্রীদের লম্বা সারি দেখা যায়। কল্যাণপুরে সোহাগ কাউন্টারে ভোর ছয়টায় লাইনে দাঁড়িয়ে সকাল ১০টার দিকে ঢাকা-মাগুরার তিনটি টিকেট কিনতে পেরেছেন সাইফুল ইসলাম। বেসরকারি বীমা কোম্পানির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ভোর ছয়টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে চার ঘণ্টা পর আমি তিনটা টিকিট কিনতে পেরেছি। টিকিট বিক্রি খুব স্লো। ভেতরে গিয়ে দেখি ফোনে ফোনেও টিকিট বিক্রি হচ্ছে। অনেকের রেফারেন্সেও টিকিট বিক্রি করছেন তারা। ’ তার প্রশ্ন- ‘যদি ফোনে ফোনে আর রেফারেন্সে টিকিট বিক্রি হয়, তাহলে আমরা কী করবো? আমরা কি বাড়ি যাব না?’সাইফুলের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোহাগ পরিবহনের এক স্টাফ বলেন, ‘টিকিট বিক্রি স্লো সত্য। তবে আমরা ইচ্ছা করে স্লো বিক্রি করি না। একজন যাত্রী যখন টিকিট কিনতে আসেন, তখন তিনি প্রথমে তার সুবিধামতো তারিখ ও সময়ের টিকিট চান। যদি দিতে পারি তাহলে তাড়াতাড়িই হয়ে যায়। যখন তার সুবিধা মতো টিকিট না থাকে তখন আমরা অন্যান্য দিনের ও সময়ের টিকিট (খালি থাকা সাপেক্ষে) তাদের দেখাই। কিন্তু এখানেও দেরিটা তারাই করেন। সিট সামনে না পেছনে। না হয় মাঝে আছে নাকি জানতে চান। তারপর সিদ্ধান্ত নিতেও তারাই সময় নেন। এক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই।’

ফোনে ফোনে বা রেফারেন্সে টিকিট বিক্রির প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা ভাই হবেই। বিশেষ ব্যক্তিরা তো বিশেষভাবেই টিকিট চাইবেন। যেমন আপনারা (সাংবাদিক) হয় আমাদের বড় কর্মকর্তা কিংবা মালিকের রেফারেন্সে টিকিট চান, তখন আমাদের না দিয়ে উপায় আছে বলেন? নেতাদের রেফারেন্স, কর্তকর্তা এবং মালিকের রেফারেন্স সব মিলিয়ে অর্ধেক টিকিটই রেফারেন্সে বিক্রি হয়ে যায়।’



মন্তব্য চালু নেই