৪৫ দিনেও নেই ময়নাতদন্ত, তাহলে কি?

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগী জাহান তনুর খুনের কারণ নির্ণয় করতে লাশ কবর থেকে তুলে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করা হয়। এরপর ৪৫ দিন পার হয়েছে, কিন্তু আজ পর্যন্ত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি। কবে দেওয়া হবে, সেটাও নিশ্চিত করে বলছেন না এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এদিকে তনুর মা দুই সেনা অফিসারের নাম সিআইডির কাছে জানালেও, তাতে কোন আগ্রহ দেখাচ্ছেনা তদন্ত বিভাগ বলে অভিযোগ উঠেছে।

তিন সদস্যের যে মেডিকেল বোর্ড দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করেছে, তার প্রধান কামদা প্রসাদ সাহা বৃহস্পতিবার বলেন, ‘কবে নাগাদ ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেব, এটা বলা মুশকিল। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দিতে দেরি হচ্ছে প্রক্রিয়াগত কারণে।’

প্রক্রিয়া কী, সেটা স্পষ্ট করে বলেননি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামদা প্রসাদ সাহা। তিনি দাবি করেন, ‘এটা অন্য ময়নাতদন্তের মতো না, তাই দেরি করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের সঙ্গে অপরাধের সম্পর্ক নেই। অপরাধীদের ধরা এক জিনিস, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আরেক জিনিস।’

এদিকে তনুর খুনের রহস্য উদ্ঘাটন করতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনকে একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান মনে করছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। তদন্ত-তদারক কর্মকর্তা কুমিল্লা সিআইডির বিশেষ সুপার মো. নাজমুল করিম খান বলেন, ‘দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের জন্য আমরা উদ্গ্রীব আছি। তারপরও আমরা বসে নেই, তদন্তকাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’

গত ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের ভেতর একটি ঝোপ থেকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর ৫৪ দিন পার হয়েছে। এখন পর্যন্ত খুনি বা খুনের কারণ শনাক্ত করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থাগুলো। এ অবস্থায় দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ও সিআইডির দিকেই তাকিয়ে আছে তনুর পরিবার।

তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে সিআইডির কার্যক্রমে সন্তুষ্ট আছি। কিন্তু দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেওয়া নিয়ে কেন কালক্ষেপণ হচ্ছে, তা জানতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী যাঁদের নাম বলেছে, তাঁরাই হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে মনে করছি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ও সিআইডির দিকেই তাকিয়ে আছি আমরা।’

প্রসঙ্গত, তনুর মা আনোয়ারা বেগম গত মঙ্গলবার প্রথমে সাংবাদিকদের, তারপর সিআইডির কর্মকর্তাদের বলেন, সার্জেন্ট জাহিদ ও সিপাহি জাহিদ তনুকে ডেকে নিয়ে যান। এরপর আর তনু ফিরে আসেননি। ওই দুই সেনাসদস্য এ হত্যায় জড়িত বলে তিনি মনে করেন।

তনু হত্যার তদন্তের শুরুতেই ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন নিয়ে বিতর্ক ওঠে। প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়, মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এতে তনুর মাথার পেছনের জখমের কথা গোপন করা হয়। কানের নিচের আঁচড়ের দাগকে পোকার কামড় বলা হয়। এ ছাড়া ঘটনাস্থলের মাটি কেটে নিয়ে আলামত নষ্ট করার অভিযোগও ওঠে। নৃশংস এ হত্যার বিচারের দাবিতে টানা অনেক দিন ধরে দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।

পরে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ণয় করতে পুলিশ কবর থেকে লাশ তুলে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করে। এরপর আদালতের নির্দেশে তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে গত ৩০ মার্চ তনুর লাশের দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত হয়। এরপর এখন পর্যন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, আমরা ধৈর্যের শেষ প্রান্তে উপনীত হয়েছি। এত দিন আমাদের বলা হয়েছে, এটা করা যাবে না, ওটা বলা যাবে না। আমরা আর কত অপেক্ষা করব? এখন বিষয়টিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও তদন্ত সংস্থাগুলোকে বিবেচনায় নিতে হবে।’ সূত্র প্রথম আলো।



মন্তব্য চালু নেই