৪৮ ঘণ্টা চেষ্টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলা নিল পুলিশ

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা প্রভাবশালী, তাই রাজধানীর বনানী থানায় ধর্ষণের মামলা করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে টানা ৪৮ ঘণ্টা যুদ্ধ করতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অবশেষে আজ শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে বনানী থানা মামলা নেয়। এখন স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সারা রাত মামলার বাদী এক ছাত্রীকে থানায় থাকতে হবে বলে জানিয়েছে বনানী থানার পুলিশ।

মামলার বাদী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের পুরোনো এক বন্ধু প্রধান আসামির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। পরিচয়ের দুই সপ্তাহ পর গত ২৮ মার্চ তাঁদের দুজনকে ওই আসামি তাঁর জন্মদিনের পার্টিতে দাওয়াত করেন। অনেক অনুরোধের পর তাঁরা ওই পার্টিতে যান। পার্টি ছিল বনানীর একটি চার তারকা হোটেল ও রেস্তোরাঁয়। ওই পার্টিতে ওই দুই শিক্ষার্থীর পুরোনো বন্ধুও ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে তাঁদের ফেলে বন্ধুটি চলে যান। আসামিরা তখন তাঁদের হোটেলের দুটি কক্ষে আটকে ফেলেন। সে সময় আসামিদের সঙ্গে দেহরক্ষী ও গাড়িচালক ছিলেন। প্রধান আসামি ও তাঁর এক বন্ধু দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করেন। অভিযোগকারী শিক্ষার্থী দাবি করেন, তাঁদের ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করেন আসামির গাড়িচালক।

বনানী থানা-পুলিশ আসামিদের নাম-ঠিকানা কিছুই দেননি ‘তদন্তের স্বার্থে’। মামলার বাদী বলেন, তিনি পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। তাঁকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সারা রাত থানায় থাকতে হবে বলে জানিয়েছে বনানী থানার পুলিশ।

ধর্ষণের অভিযোগকারীকে থানায় থাকতে হয় কি না, জানতে চাইলে উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের উপকমিশনার ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, তিনি সারা দিন অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় আলাদাভাবে এই বিষয়টি নিয়ে তেমন খোঁজখবর করতে পারেননি। তবে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কাউকে থানায় রাখার কথা নয়।

এক মাসেরও বেশি সময় পর কেন মামলা করলেন, জানতে চাইলে অভিযোগকারী বলেন, ধর্ষণের পর আসামি তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছিলেন। বেশ কিছুদিন ধরে আসামির দেহরক্ষী তাঁকে (বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রীকে) অনুসরণ করছিলেন। তাঁদের বাসায় গিয়ে নানা বিষয় জিজ্ঞাসা করছিলেন। এমনকি ভিডিও আপলোড করারও হুমকি দিচ্ছিলেন। সে কারণে তাঁরা থানায় যান।

এ বিষয়ে খোঁজ নিতে বনানী থানায় গেলে পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল মতিন শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নানা প্রশ্ন তোলেন। কেন মামলা নিচ্ছেন না, জানতে চাইলে বলেন, প্রাথমিক তদন্ত ছাড়া তিনি মামলা নিতে পারেন না। কারণ, পুলিশ মহাপরিদর্শক ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বিনা দোষে কাউকে হয়রানি করতে নিষেধ করেছেন।

প্রাথমিক তদন্তের সময় ওই কর্মকর্তা অভিযুক্ত আসামিদের সঙ্গে কথা বলেছেন কি না, জানতে চাইলে আবদুল মতিন বলেন, তিনি তাঁদের সঙ্গে কথা বলেননি। তাঁদের পরিচিত বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বলেছেন। কেন কথা বলেননি, তাঁর ওপর কোনো চাপ আছে কি না, জানতে চাইলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আইনের চোখে সবাই সমান। মামলা না নিতে তিনি ২৫ লাখ টাকা নিয়েছেন, এমন অভিযোগের সত্যতা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।

চার তারকা যে হোটেল ও রেস্তোরাঁয় সেই রাতে অনুষ্ঠান ছিল, সেই হোটেলের মহাব্যবস্থাপক স্বীকার করে বলেন, আসামিরা ওই রাতে হোটেলের কক্ষ ভাড়া নিয়েছিলেন। তবে তাঁদের সঙ্গে আর কেউ থাকবে, সে কথা হোটেল কর্তৃপক্ষ জানত না। কেউ তাদের কাছে ধর্ষণের অভিযোগও করেনি।



মন্তব্য চালু নেই