৫টি কারণে ধ্বংস হচ্ছে সন্তানের বিকাশ

লিডারশিপ এক্সপার্ট এবং মনোবিজ্ঞানের চমৎকার বিখ্যাত সব বইয়ের লেখক ডা. টিম এলমোর শিশুদের বেড়ে ওঠার পদ্ধতি লক্ষ্য করেন। দীর্ঘদিনের গবেষণায় তিনি লক্ষ্য করেন আমাদের বাবা-মায়েরা শিশূদের যেভাবে বড় করেন তার মাঝে রয়েছে নানান রকম ভুল। ভুলগুলো ছোট হলেও এর প্রভাব পড়ে দীর্ঘমেয়াদে। ছোটবেলাতেই শিশুদের ভীত গঠন হয়। আর তখন কোন শিশু কিভাবে বেড়ে উঠছে তার উপর নির্ভর করে বড় হয়ে সে নেতৃত্ব দেবে নাকি দাঁড়াবে নেতার পেছনে কর্মী হয়ে।

আসুন জেনে নিই কী কী ভুল আমরা করি যা ভুল প্রভাব ফেলে শিশুর বিকাশে।

১। আমরা আমাদের শিশুদের ঝুঁকি নিতে দিই না
আমরা সারাক্ষণ আমাদের শিশুদের সামলে রাখি। সকল ধরণের অনিরাপত্তা থেকে তাদের দূরে রাখতে চাই। আমরা বাসই করি একটি বিপদসংকুল পৃথিবীতে। এখানে যে কোন সময় যে কোন বিপদ ঘটতে পারে। আমাদের সবসময় শেখানো হয় ‘Safety First’। কিন্তু শিশুদের এই সর্বক্ষণ ভাল চাওয়াই হতে পারে তাদের জন্য বিপজ্জ্বনক। কারণ সে যখন ঝুঁকি নিতে শেখে না তখন তার শিক্ষাগুলো হয়ে যায় বইভিত্তিক, অভিজ্ঞতাভিত্তিক নয়।

২। আমরা দ্রুত উদ্ধারে এগিয়ে আসি
আজকের তরুণ সমাজ সেইসব জীবনমুখী অভিজ্ঞতা নিয়ে বেড়ে ওঠে না যা ৩০ বছর আগেও হতে দেখা যেত। কারণ বড়রা এখন সারাক্ষণ তাদের সাথে সাথে থাকে, তাদের যেকোন সমস্যার সমাধান করে দেয়, পথ দেখিয়ে দেয়। এর ফলে তারা নিজেরা সমস্যা থেকে বেড়িয়ে আসতে শেখে না। মাথা না খাটানোর কারণে তারা অনেক সহজ সমস্যাও সমাধান করতে পারে না। পরবর্তীতে দেখা যায়, তাদের মাঝে দ্রুত উদ্বিগ্ন হওয়া, মাথা ঠান্ডা রাখতে না পারা, দ্রুত কোন উপায় বের করতে না পারার মত ঘাটতি দেখা দেয়।

৩। সহজে বকা দিই, থামিয়ে দিই
শিশুর অনেক স্বতস্ফূর্ত আচরণ আমরা থামিয়ে দিই, বকা দিয়ে তাকে আর আগে বাড়তে দিই না। যে কোন নতুন কিছু সৃষ্টির পেছনে রয়েছে মানুষের স্বতস্ফূর্ততা। যে জিনিস অভ্যন্তরের প্রতিভা থেকে তৈরি তা কখনোই আরোপিত শিক্ষা থেকে তৈরি হতে পারে না। আমরা অনেক বাবা-মায়েরাই এটা বুঝতে পারি না। তাই শেকড়েই ধ্বংস হয়ে যায় শিশুর অনেক সম্ভাবনা।

৪। শিশু যা চায় তাই তার হাতে তুলে দেওয়া
আপনার শিশু সবসময় আপনাকে ভালবাসবে এটা নাও হতে পারে। তাকে সবসময় সন্তুষ্ট রাখা সম্ভব নয়। তাই মাঝে মাঝে ‘না’ বলুন। কিছু চাইলে প্রশ্ন করুন। আমরা যখন কোন প্রশ্ন ছাড়াই শিশুর সব চাহিদা পূরণ করি তখন সেটা তার মধ্যে এক রকম বিলাসী মনোভাব তৈরি করে। সে মাথা খাটানো, পরিশ্রম করে অর্জন করা ছেড়ে দেয়। কারণ সে তো জানেই যে সব কিছু সে এমনিই পাবে। কিন্তু তার আজকের চাহিদা চাওয়া মাত্র পূরণ করতে পারলেও সবসময় আপনি নাও পারতে পারেন। তখন সে হয়ত আপনার অপারগতা বুঝতে চাইবে না।

৫। আমরা আমাদের অতীতের ভুলগুলো শেয়ার করি না
আমরা নিজেদেরকে দেখতে চাই আমাদের সন্তানের হিরো হিসেবে। সেজন্য ভুলগুলো কোনমতেই স্বীকার করি না, জানাই না। এতে শিশু বুঝতে পারে না জীবনে সফলতা-বিফলতা সবই থাকবে। আমরা যদি আমাদের সন্তানকে আমাদের ভুলগুলো সম্পর্কে বলি তার মানে এই নয় যে এতে সে আমাদের কথা শুনবে না বা আমরা তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। বরং এভাবে আমাদের সন্তান বুঝতে পারবে যে, তাদের বাবা-মায়েরা অভিজ্ঞ। যে বিষয়ে সে না বুঝেই জেদ করছে সে বিষয়ে তার অনেক আগে থেকেই তার বাবা মা জানেন এবং বোঝেন। এভাবেই শিশুরা নিজেদের জন্য আদর্শ খুঁজে পায় এবং ব্যার্থতাকে গ্রহণ করার মানসিকতা অর্জন করে।



মন্তব্য চালু নেই