৫০ টাকায় পেটপুরে মাংস-ভাত ‘গরিবের রেস্টুরেন্টে’

রফিক আজাদের বিখ্যাত কবিতা ‘ভাত দে হারামজাদা’র পঙতিগুলোর বাস্তবতা আপনি খুঁজে পাবেন রাতের শাহবাগ মোড় থেকে জাতীয় জাদুঘর এবং পাবলিক লাইব্রেরির সামনে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দিকে হাঁটলেই। চোখে পড়বে ক্ষুধার্থ মানুষগুলোর হাহাকার। তবে তাদের পেট ভরে খাওয়ার জন্য রয়েছে ‘গরিবের রেস্টুরেন্ট’।

শাহাবাগ মোড় থেকে টিএসসির দিকের ফুটপাত ধরে প্রতিদিন রাত ৮টার পর থেকেই ভাত-তরকারির কিছু উন্মুক্ত দোকান দেখা যায়। প্রতিটি ‘গরিবের রেস্টুরেন্ট’ এ মধ্যমণি হয়ে বসে থাকেন একজন মধ্য বয়স্কা তাকে সবাই ‘খালা’ নামে ডাকে। যিনি পরমস্নেহে যত্নসহকারে ভাত-তরকারী তুলে দিচ্ছেন পাতে পাতে। খালাকে ঘিরে ভোজনরত কিছু খেটেখাওয়া মানুষ।

এদেরই একজন কুলসুম খালা। কি কি খাবার তিনি বিক্রি করেন জানতে চাইলে বলেন, ‘আমার এইহানে ভাত-মাছ-মাংস-ভার্তা-ভাজি সাথে ডাল পাওয়া যায়।’

খাবারের দাম কেমন? একটু হাসি দিয়ে বললেন, ‘মাছ দিয়া খাইলে ৪০ ট্যাহা সাথে ভাত ডাইল ফিরই (ফ্রি) আর মাংস (মুরগী) দিয়া খাইলে ৫০ ট্যাহা তার লগেও ভাত ডাইল ফিরই।’

কেউ যদি শুধু ভর্তা-ভাজি-ডাল দিয়ে খায়? এমন প্রশ্নের জবাবে কুলসুম খালা বলেন, ‘তহন ২০-২৫ ট্যাহা লই।’

খাবার কোথায় রান্না হয়? ‘বাসা থ্যাইক্কা রান্না কইরা লইয়া আই।’ আপনার বাসা কোথায়? ‘আমার বাসা চরে (কামরাঙ্গীর চর), ওইহান থ্যাইকা ভ্যানে কইরা সব আনি।’

একটি বড় বোলে কাঁচা মরিচ, পিঁয়াজ আর সঙ্গে লেবুও রাখা আছে তার কাস্টমারদের জন্য। পাশেই কলস ভর্তি পানি। খাওয়ার পর সেই পানিই পান করছে সবাই। রাত ৮টায় তিনি বসেন, থাকেন ১১টা পর্যন্ত। এই কয়েক ঘণ্টার বিকিকিনিতে কুলসুম খালার লাভ থাকে তিন থেকে চারশ টাকা।

রিকশাচালক লোকমান বলেন, ‘এইখানে খাইয়া আরাম আছে। ভাতের কোনো লিমিট নাই। খাওয়ন মজাও অয়। আমরা গরিবের লাইগা এইডাই ভালা হোটেল।’

তার পাশে বসেই আরেকজন খাচ্ছিলেন। নাম শরীফ মিয়া, তিনিও রিকশাচালক। বললেন, ‘আমরা যারা রিকশা-সিএনজি চালাই তারার লাইগা এইখানে খাওয়াটাই সুবিধার। কারণ এইখানে রিকশা ছাইরা আমার যাওন লাগে না। বেশিরভাগ সময় রিকশাত বইয়াই খাই।’

রিকশাওয়ালা, সিএনজি অটোরিকশাওয়ালা এবং কিছু ভবঘুরে লোককেই এখানে বেশির ভাগ সময় খেতে দেখা যায়। শাহবাগে খোলা আকাশের নিচে প্রকৃতির খুব কাছাকাছি বসা এসব ‘গরিবের রেস্টুরেন্ট’ এ খেতে বসা প্রতিটি মুখেই দেখা মিলে এক অন্যরকম তৃপ্তির ছাপ। যেন তারা বাড়ির খাবার খেয়ে তুলছে শান্তির ঢেকুর। -বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই