৭০ রকমের কাজ করি মাত্র তিন হাজার টাকায়!

‘দুই যুগেরও বেশি সময় গ্রাম পুলিশের চাকরিতে কাটাইয়া দিলাম। সামান্য ৩ হাজার টাকা বেতন দিয়া বউ পোলাপাইন লইয়া কোন রকমে বাইচ্যা আছি। অহন বাজারে জিনিসপত্রের যা দাম, তার ওপর পোলাপাইনের লেখাপড়ার খরচ, আর চলতে পারতাছি না। কইতে পারেন ক্ষিধের জ্বালার কথা জানাতে মিটিংয়ে আইছি।’

মাদারীপুর রাজৈর থানার খালিগাঁ ইউনিয়নের সমগ্গ গ্রামের একজন গ্রাম পুলিশ সদস্য গাউস শেখ। স্ত্রী ও ছেলেমেয়েসহ ছয় সদস্যের পরিবার। সারাজীবন কষ্টে সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা করাচ্ছেন। এখন তারা কেউ এম এ, কেউ ল’তে অনার্স কেউবা ডিগ্রীতে আবার কেউবা স্কুলে পড়ে। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মনে জীবনযুদ্ধের এসব কথা বলছিলেন তিনি।

শুধু গাউস শেখই নন, তার মতো হাজারও গাউজ আজ শনিবার সকালে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে বাংলাদেশ গ্রাম পুলিশ কর্মচারী ইউনিয়ন আয়োজিত মহাসম্মেলন ২০১৬ তে অংশগ্রহণ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছেন।

জানা গেছে, তিন শতাধিক বাস ভাড়া করে ৩০ হাজারেরও বেশি গ্রাম পুলিশ সদস্য মহাসমাবেশে যোগ দেন। নীল ও আকাশি রংয়ের পোশাকে ছেঁয়ে যায় গোটা শহীদ মিনার চত্বর।

আবদুল বারেক মজুমদার। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার গুইলশাখালি এলাকার গ্রাম পুলিশ। তিনি জানান, সাধারণ মানুষের কাছে তারা দফাদার ও মহল্লাদার নামে পরিচিত হলেও তারা গ্রামীণ ট্যাক্স কালেকশন, জম্মমৃত্যুর তালিকা প্রণয়ন, ভিজিভি ভিজিএফ বণ্টন, বিধবাভাতা বয়স্ক ভাতা বিষয়ে অনুসন্ধান ও তালিকা প্রণয়ন, ইউনিয়ন পরিষদের নোটিশ জারি, পুলিশের সঙ্গে আসামি ধরার কাজ, নির্বাচনী ডিউটি, যে কোন সরকারি অনুষ্ঠানের চিঠি বিলি, রাতে পাহারা দেয়া, রেল লাইন পাহারা দেয়া ও নিয়মিত থানায় হাজিরা দেয়াসহ ৭০ ধরনের কাজ করি। কিন্তু বেতন মাত্র ৩ হাজার টাকা। সরকার দেড় হাজার ও ইউনিয়ন পরিষদ দেড় হাজার টাকা দেয়। এ বেতনে তাদের চলাফেরা করা দায় হয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ গ্রাম পুলিশ কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক জানান, ৪৭ হাজার গ্রাম পুলিশকে চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারীর ন্যায় জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তভুক্তকরণ, কেন্দ্রীয়ভাবে স্থায়ী হেডকোয়ার্টার ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, স্বল্পমূল্যে রেশনিং ব্যবস্থা চালু, ন্যূনতম পাঁচ লাখ টাকা অবসর ও ঝুঁকিভাতা প্রদানসহ চাকরির নিশ্চয়তার দাবিতে এ মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, গ্রাম পুলিশের কোন স্বতন্ত্র বেতন স্কেল নেই। আগে দফাদাররা ২১০০ টাকা ও মহল্লাদাররা ১৯০০ টাকা বেতন পেতো। বর্তমান সরকারের আমলে দফাদারদের বেতন ৩৪০০ ও মহল্লাদারদের বেতন ৩০০০ টাকা। বেতনের অর্ধেক সরকারি কোষাগার ও বাকি অর্ধেক ইউনিয়ন পরিষদ অফিস দেয়। গ্রাম পুলিশের বেতন সরকারি চতুর্থ শ্রেণির বেতন স্কেলে উন্নীত করা হলে গ্রামীণ উন্নয়ন আরও উন্নত হবে বলে তিনি আশা করেন।জাগো নিউজ।



মন্তব্য চালু নেই